সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

প্রবন্ধ - শ্রী শুভ্র

জন্ম যদি তব বঙ্গে
শ্রী শুভ্র


বহু যুগ আগে বৃটিশ শাসনের সেই পরাধীনতার কালেই প্রমথ নাথ বিশী বাঙালী জাতির প্রকৃতি সম্বন্ধে আলোচনা কালে বলেছিলেন, বাঙালীর মোটো হচ্ছে- "এসো ভাই টেনে নামাই"! এস ওয়াজেদ আলীর ভাষায় বলা যায়, "সেই ট্র্যাডিশান সমানে চলছে!" দেখা যাচ্ছে দেশ স্বাধীন হলেও বাঙালীর রীতি বদলায় নি! শোনা যায় দয়ার সাগর বিদ্যাসগর, যাঁর কাছে উপকৃত হওয়া বাঙালীর সংখ্যা মোটেও নগণ্য নয়, শেষ জীবনে কারুর কাছে আঘাত পেলে বলতেন, "ওহে মনে তো পড়ে না কস্মিনকালেও তোমার কোনো উপকার করেছি কিনা!" বাঙালীর কৃতজ্ঞতা বোধ তার স্বজাতি প্রীতির মতোই দূর্লভ বলা চলে! শ্রী চৈতন্য থেকে শুরু করে অনেক মহাপুরুষেরই সেই উপলব্ধি হয়েছে হাড়ে হাড়ে!

বাংলার ইতিহাস বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস! বাঙালীর ইতিহাস আত্মঘাতী ইতিহাস! বঙ্কিম চন্দ্রের লোক রহস্যের বাবু বৃত্তান্ত থেকে নীরদ চন্দ্র চৌধুরীর আত্মঘাতী বাঙালী পর্যন্ত বাঙালীর পরিক্রমণে স্বয়ং বিধাতাও বোধ করি বারংবার বিষম খেয়ে অস্থির হন! বস্তুত বিবাদ বিসংবাদ বিদ্বেষ বাঙালীর মজ্জা গত! স্বজাতির সাথে কলহে আমরা যেমন পারদর্শী বিদেশীর সাথে গলাগলিতেও ততোধিক উৎসাহী! পরজাতির সাথে প্রীতি বিনিময় সৌহার্দ স্থাপন দোষাবহ নয়! কিন্তু ভয়াবহ আমাদের বিদেশী সংস্কৃতির অনুকরণ প্রীতি! বৃটিশ আমলে আমাদের মক্কা ছিল লন্ডন! একবার ঘুরে আসতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যেত! এখন হয়েছে গ্রীণকার্ড! যা না হলে সমাজে মান থাকে না! বষ্কিমচন্দ্রের ভাষায় পর ভাষা পারদর্শীতায়, মাতৃভাষা বিরোধীতায় ও পর জাতি নিষ্ঠীবনে পরিতৃপ্তিতে বাঙালীর সহজাত প্রতিভা সহজেই উন্মীলিত হয়!এহেন বাঙালী যে (ইংরেজী হিন্দী না জানা) স্বজাতি বিদ্বেষী হবে সে কথা বলাই বাহুল্য!

নকল নবিশ অনুকরণ পটু মুখস্ত বিদ্যায় ডিগ্রী ধারী বাঙালী স্বভাবতই পরশ্রীকাতর ও ঈর্ষান্বিত চরিত্রে বলশালী! তাই দূর্বলের কাছে অত্যাচারী সবলের কাছে বিনীত, সহধর্মীর কাছে মুখে হাসি আর পিছনে ছুরি বাঙালীর স্বভাব প্রকৃতি! বস্তুত কাঁকড়া প্রজাতির সংস্কৃতিতেই বাঙালীর জন্ম! তাই বিশী কথিত সেই "টেনে নামানো"র প্রয়াসে বাঙালীর উদ্যমে কোনদিন কোনো ঘাটতি ছিল না, আজও নেই! বিখ্যাত সাহিত্যিক যাযাবর একবার বন্ধু সমারোহে গুরু দেব রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে বিশ্বকবির কাছে বিনীত প্রশ্নে জানতে চেয়েছিলেন, কবির "সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে" গানটি কবি তার শেষ জীবনে লিখলে কি একই ভাবে লিখতেন? উত্তরে বলেছিলেন বাংলার সর্ব কালের সর্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, "এখন লিখলে সার্থক কথাটা কেটে দিতাম!" আশি বছরের জীবন অভিজ্ঞতার কি নিদারুণ উপলব্ধি! দয়ার সাগর বিদ্যাসাগরের আক্ষেপের মতোই কি তীব্র ভয়াবহ! যদিও তখনও কবি জানতেন না তাঁর সেই কবি কল্পনার সোনার বাংলা খুব শীঘ্রই কেটে দু টুকরো করা হবে! আর সেই বিদেশী ষড়যন্ত্রে হাত লাগাবে তাঁরই স্বজাতির বিশিষ্ট জনেরা! হয়ত তাঁরই স্নেহভাজন কেউ কেউ!

১৯৪০ সুকান্তের কলম থেকে জন্মাল, "অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি, জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশ ভূমি" আর আমরা যারা আজ জীবনের অর্ধশতাব্দী পাড় করছি তারা আরও অনেক বেশি অবাক হয়েছিলাম জ্ঞান বুদ্ধির প্রথম উন্মেষ লগ্নেই, "জন্মেই দেখে ভঙ্গ বঙ্গভূমি!" কি বিচিত্র এই দেশ! ১৯৮৯, বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে মিলন হল দুই জার্মানীর! আমরা উদ্বুদ্ধ হলাম না তবু! কারণ আমরা তো জানি বিচ্ছেদই আমাদের মন্ত্র! বিভেদেই আমাদের শক্তি!

বিধর্মী স্বজাতি আমাদের বিদেশী! তাই কাঁটা তারের দংশন দহনের সীমারেখার দুই পাড়েই শৈশবাভ্যস্ত গ্রন্থগত পাণ্ডিত্য, বাক্যে সরস্বতী ও কলহ প্রিয় পরধন লোভে মত্ত বাঙালিকুল, কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কুল কুল হয়ে আজও বিভক্ত!ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে ৪৭এর বাংলা ভাগে কোটি কোটি বাঙালী হিন্দুর নিজের জন্মভূমি পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে সহায় সম্বলহীন ভাবে দেশ ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হয়ে এ পাড়ে চলে আসার মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব আর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার প্রতি অন্ধ আনুগত্য স্পষ্টতই চোখে পড়ে!

কিন্তু বিষয়টা আবার এতটা সরলও নয়! মূলত বৃটিশের নির্দেশে ও সহায়তায় লাগানো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বাঙালী হিন্দুরা মুসলিম শাসনের অধীনে নিরাপদ নয় আশংকা করেই এই দেশ ত্যাগ! অর্থাৎ ইউরোপের জাতিগুলি যেখানে দেশপ্রেমের প্রয়োজনে প্রাণ ত্যাগেও ভীত ছিল না, বাঙালী সেখানে প্রাণ বাঁচানোর জন্যে দেশ ত্যাগেও পিছপা নয়! আপনি বাঁচলে দেশের নাম!বাঙালীর দেশপ্রেমের কথা বলতে গেলে গোলমাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি! দেশ সম্পর্কে বাঙালীর ধ্যান ধারণা রীতিমত গবেষণার বিষয়! যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির অনেক আগে দেশ ছিল চলা ফেরা জানা শোনার গণ্ডীর সীমানায় আবদ্ধ! তার বাইরে সবটাই বিদেশ!আর আধুনিক সভ্যতায় দেশ পাসপোর্টের পরিসরে নির্দিষ্ট! আবার বৃটিশ আমলে বাংলার তথাকথিত নব জাগরণের সোনালী দিনে বাংলায় দেশ বলতে বর্ণহিন্দু দের দেশ বোঝাতো, শিক্ষিত সমাজে! অন্যদিকে বাঙালী মুসলিম সমাজে শিক্ষা প্রসারের সাথে সাথে দেশ হয়ে ওঠে ইসলামিক! যার মধ্যে মক্কা ,মদীনা, আরব্য রজনীও হয়ে ওঠে বাংলা! ফলে দেশপ্রেম হয়ে ওঠে মুলত সম্প্রদায় প্রেম! অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক!মাটির সাথে সম্পর্ক হীন!ফলে বাংলার শিকড়ের সাথে, বাংলার ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সাথে বাংলার হিন্দু মুসলিম কোনো সম্প্রদায়েরই কোনো আত্মিক যোগ গড়ে ওঠে নি কোনো কালেই!

আর এইটি বুঝতে পেরেই সুচতুর বৃটিশ যখন বাঙালীর মেরুদণ্ডটিকে চিরকালের মতোই ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করল তখন দুই একজন ছাড়া বাংলা ভাগের কারণে অশ্রুপাত করার মত বাঙালী খুঁজে পাওয়া গেল না! হিন্দুরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতায় উদ্বেল হল! মুসলিমরা পাকিস্তানের! বাংলা যে স্বাধীনতা পেল না, সার্বভৌম অখণ্ড দেশ রূপে বিশ্ব সভায় আত্মপ্রকাশ করল না, তাতে সেদিনের বাঙালীর কিছুই এসে গেল না! বৃটিশরা শুধু মুচকি হাসল!অন্যদিকে বাংলার নিয়তির নীরব অশ্রুপাত কারুরই দৃষ্টিগোচর হলো না!বাংলার নিয়তির সেদিনের নীরব অশ্রুপাতের আংশিক প্রায়শ্চিত্য করতে হল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীকে তিরিশ লক্ষ প্রাণের মূল্যে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতায়! তারপর চার দশকের সময় সীমায় সরকারী সৌজন্যে ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের নিরন্তর ধর্ষণে আজ বাংলাদেশের বাঙালীকে হতে হয়েছে বাংলাদেশী! মৌল বাদ ও সম্রাজ্যবাদের যুগল বন্দীর সাঁড়াশি আক্রমণে সেখানে আজ শাহবাগ আন্দোলনকে শিখণ্ডী করে দেশ ভাগ হয়ে গিয়েছে আস্তিকে আর নাস্তিকে! বাঙালী হয়ে গেলেই বিপদ! নিশ্চিন্তে থাকতে গেলে হতে হবে বাংলাদেশী! ভারতীয় উপমহাদেশের সুপ্রাচীন সভ্যতার সাথে যে নাড়ির স্পন্দন রয়ে গিয়েছে বাংলার অস্তিত্বে, ভুলতে হবে সেকথা! ভাবতে হবে মক্কা মদীনার ঐতিহ্য!

এ পাড়ের বাঙালীকে অবশ্য তেমন কোনো সংশয় দ্বন্দ্ব সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়নি! কারণ এ পাড়ে বাঙালী এখন ভারতীয় হয়ে সানন্দা! একটু প্রাগ্রসররা, গ্রীণকার্ড হোল্ডাররা অবশ্য নিজেদের বিশ্ব নাগরিক ভেবে আত্ম প্রসাদ লাভ করেন বেশি! আমরা এ রাজ্যে কেউ ভারতীয় হিন্দু, কেউ ভারতীয় মুসলমান! ভুলেও কেউ নিজেদের বাঙালী জাতীয়তা নিয়ে আর গর্ব অনুভব করি না, পাছে কেউ আমাদের প্রাদেশিকতার দোষে দোষী করতে পারে!একটু গভীরে ঢুকলে দেখা যাবে বাঙালী জাতীয়তা অনেকটাই সোনার পাথর বাটিতে কাঁঠালের আমসত্বর রসাস্বাদন করার মতো! পূর্বেই বলেছি বাংলার নব জাগরণ ছিল বর্ণহিন্দু দের জাগরণ; যার অভিমুখ ছিল ভারতীয় হিন্দুত্বের সনাতন ঐতিহ্যের দিকে!

শিক্ষিত প্রাগ্রসর বাঙালী হিন্দু যেমন ভারতীয় সনাতন হিন্দুত্বের প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে নিজের আত্ম পরিচয়ের সন্ধান করল, ঠিক তেমনই শিক্ষার বিস্তারের সাথে সাথে বাঙালি মুসলিম আরবের ইতিহাসে, ইসলামের অনুশাসনের মধ্যেই নিজেদের আত্ম পরিচয় আছে ভেবে আত্ম প্রসাদ লাভ করল! উভয় সম্প্রদায়ই বিস্মৃত হল তার বাঙালী জাতিসত্ত্বার সাধারণ ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার! কি বিচিত্র এই জাতি! বাঙালী হিন্দু ভুলে গেল, সনাতন ভারতীয় ঐতিহ্যের
উত্তরাধিকারী হয়েও বাঙালী একটি স্বতন্ত্র জাতি! ভারতের অন্যান্য জাতির থেকে ভিন্ন সংস্কৃতির ধারক! তার এই ভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে, আপন মাতৃভাষায় সে যে এক স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বা সে কথা স্মরণে রইল না তার!বাংলার ইতিহাসে শতাব্দীব্যাপি বর্ণহিন্দু দের দ্বারা অত্যাচারিত নিম্ন বর্ণের হিন্দু ধর্মান্তরিত মুসলমান হয়ে ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের
মধ্যে আশ্রয়ের সন্ধান করল! কিন্তু উচ্চ বর্ণের হিন্দুসমাজের হাতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ অব্যাহত থাকল শতাব্দীব্যাপি! ফলে শিক্ষার বিস্তারের সাথে বাঙালী মুসলিম তার স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে চাইল আরবের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যে! ইসলামের কঠোর অনুশাসনের মধ্যে নিজেকে ব্যাপৃত রেখে হিন্দু সমাজের বেষ্টনীর পরিধির বাইরে আপন অস্তিত্বের ভিত্তি গড়ে তুলতে গিয়ে ভুলে গেল ইসলাম সম্পূর্ণ ভাবেই বিদেশী ধর্ম! ভিনদেশী সংস্কৃতির ধারক! খৃষ্ট ধর্মের মতোই! বাংলার জলবায়ুর সাথে সম্পর্ক হীন!বাঙালী হিন্দু নিজেকে যতই ভারতীয় বলে মনে করুক ভারতের অন্যান্য জাতির হিন্দুত্ব থেকে বাঙালী হিন্দুর আচার বিচার ধর্মীয় অনুশাসন সামাজিক রীতিনীতি প্রবল ভাবেই স্বতন্ত্র! এবং সেখানেই তার বাঙালিয়ানা! দুঃখের বিষয় ইসলামের গঠন তন্ত্রে বাঙালী মুসলিম এই রকম স্বতন্ত্র কোনো বঙ্গীয় মুসলিম সংস্কৃতি গড়ে তোলার অবকাশ পায়নি! তাই সেই অর্থে আজও হয়ত তার স্বতন্ত্র বাঙালিয়ানা গড়ে ওঠে নি! এবং গড়ে ওঠার পরিসরগুলিও রাজনৈতিক ভাবেই রুদ্ধ করে দেওয়ার প্রবল প্রয়াস দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে বই কমেনি!

বর্তমানে বাংলাদেশে মৌলবাদী প্রবণতা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাঙালী মুসলিমের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আজ ইসলামের হাতেই বিপন্ন!অন্যদিকে বিশ্বায়নের বিপুল ঢক্কা নিনাদে বর্তমানে শিক্ষিত বাঙালিকুল কেউ আর বাঙালী থাকতে রাজী নয়! সবাই এখন গ্লোবাল ভিলেজে পা রাখতে তৎপর! যে কারণে শিক্ষিত মাত্রেই গ্রীণকার্ডের জন্যে মরিয়া! কারণ বাঙালীর গ্লোবাল ভিলেজ এখন মার্কিন মুলক! এবিষয়ে উভয় বঙ্গের মধ্যে মানসিকতার মিল লক্ষণীয়!আর উচ্চ শিক্ষিত এই বঙ্গ সন্তানদের বাইরে যে বিপুল জনগোষ্ঠী তারা পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় আর বাংলাদেশে বাংলাদেশী! হিন্দু আর মুসলমান! বাংলার নিয়তি তাই আজও একটা দুটো বাঙালীর মুখ দেখার জন্য করে চলেছে নীরব অশ্রুপাত! কতযুগ আগে মধু কবি আত্ম বিলাপ করেছিলেন, "পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি!"
অথচ বঙ্গের ভাণ্ডারে যে বিবিধ রতন ছিল তার খোঁজ করতে গেলে এবং বিশ্বের দরবারে সেই আত্ম পরিচয়ের দৃঢ়তর প্রত্যয়ে আত্মপ্রকাশ করতে গেলে, যে জাতীয়তাবোধে দৃপ্ত হতে হয় (বিশ্বের প্রত্যেকটি উন্নত জাতির মতো); বাঙালীর তা কোনো কালেই ছিল না! এবং বাংলা ও বাঙালীর চিরন্তন অভিশাপ যে, আজ পর্যন্ত কোনো মনীষী বা নেতা বাঙালীকে জাতীয়তাবোধে দীক্ষিত করেন নি! না, স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও নয়! কারণ বাঙালীর জাতীয়তাবোধ খণ্ড বাংলাকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে না! কখনোই না! আর স্বাভাবিক কারণেই তা কখনো গড়ে ওঠে নি বাঙালী মানসে! কারণ দুই হাজার বছরের এই জনপদে অখণ্ড বাঙালিয়ানা কোনো কালেই ছিল না! শ্রেণী বিভক্ত সমাজ অসাম্যের ভিত্তিতে বিভক্ত ছিল বরাবর!

তাই বাঙালী হয়ে জন্মালে বিচ্ছিন্নতা বিভেদ বিদ্বেষের অভিশাপ নিয়েই জন্মাতে হবে! সেই সূত্রেই বাঙালী চিরকাল ধনবান ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বশ্যতা স্বীকার করে, তার ভাষা সংস্কৃতি ধর্ম অনুকরণ করে স্বজাতির মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে আত্মপ্রসাদ লাভ করে! এটাই বাঙালীর ধর্ম! আর এই একটি বিষয়ে কি হিন্দু কি মুসলমান, কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত, কি ধনী কি নির্ধন সবাই সমান! আর এই কারণেই বিশ্বকবি আক্ষেপ করেছিলেন, "রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করনি!" সারা জীবনের অভিজ্ঞতায় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন "সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে" শেষ জীবনে লিখলে কেটে দিতেন সার্থক কথাটি! এতটাই অ সার্থক আমাদের বাঙালী হয়ে জন্মানো!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন