সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১২

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা

সম্পাদকের কলম থেকে


এই মুহূর্তে ফেসবুকের প্রভাব আজকের নতুন ও পুরোন প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত সুবিদিত। ক্ষণিকের মধ্যে সমস্ত পৃথিবীতে পরিচিতজনের কাছে নিজের বক্তব্যকে , অনুভুতিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে ক’টি সামাজিক আন্তর্জালের খ্যাতি চরম সীমায় পৌঁছেছে, তার মধ্যে, ফেসবুক অগ্রগণ্য। আর, তাই পৃথিবী এসেছে হাতের মুঠোয়। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যেমন গড়ে উঠেছে নানান ধরণের দল , তেমনই গড়ে উঠেছে বহু সাহিত্য চর্চার সংগঠন, সমমনষ্ক ও অসমবয়স্কদের নিয়ে।

ঊনিশশ’ ষাট দশকে প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকাগুলির পাশাপাশি কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে লিটল ম্যাগ আন্দোলন তৈরী হয়, যদিও প্রথমে তা ছিল রাজনৈতিক ইচ্ছাপ্রণোদিত, কিন্তু ধীরে , তা পরীক্ষা-নিরিক্ষা মূলক সাহিত্যচর্চায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু লিটল-ম্যাগ আন্দোলন সাহিত্য-চর্চার ক্ষেত্রে প্রায় বিপ্লব নিয়ে আসে। অগুন্তি, অফুরন্ত প্রতিভাধর লেখক ও লেখিকাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে লিটল ম্যাগাজিন ছিল অদ্বিতীয়, এ আমরা সকলেই জানি। একই রকম ভাবে, ব্লগজিন আন্দোলন এই পরিবর্তনের ইতিহাসের মুকুটে একটি নতুন ময়ুরপুচ্ছ যোগ করল। আমি জানিনা, হয়তো এটিকে আন্দোলন বলা অনেকেই মেনে নেবেননা, কিন্তু যা কিছু মানুষের ভালোর জন্য পরিবর্তন, তাকেই আন্দোলন আখ্যা দেওয়া যায়, আর এই মুহূর্তে, বহু শত গ্রুপের ব্লগজিন আজ রক্তবীজের ঝাড়ের মতোই বারবার আছড়ে পড়ছে ফেসবুকের মাটিতে, আর পাঠককুল বারবার মুগ্ধ হচ্ছে। মানুষ যত সহজে কম্পিউটারে বসে, অবসরে ফেসবুকের পাতা খুলে, ব্লগজিন পড়তে পারেন, তত সহজে লিটল-ম্যাগ, বা বড় পত্রিকা পড়তে পারেননা। তাই , আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ব্লগজিন আন্দোলন আরো আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, উঠবেই।

সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই, আমরা, কবিতার জন্য কবিতার পক্ষ থেকে, ব্লগজিন ‘সৌকর্য’ প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছি, আরো বহু ব্লগজিনের মতো আমরা শুধু এর উৎকর্ষতার কথাই ভাবিনি, আমরা ভেবেছি, এরকম বহু লেখক লেখিকা আছেন, যারা চেষ্টা করছেন, কিন্তু আত্মপ্রকাশের জমি খুঁজে পাচ্ছেননা, আমরা চাই, তাদেরকে তুলে ধরতে, যদি তার জন্য, বহুচর্চিত, বহুখ্যাত লেখকদের লেখা আমরা না ছাপতে পারি, তাতে আমরা পিছপা হব না, না হয় আমরা ফেসবুকের রাজপথে নাই হাঁটলাম, বন্ধুর পথেই এগোলাম, দরকারে, রাস্তা করে নিতে আমাদের সাহসের কোন কমতি হবে না, এ আমরা কথা দিতে পারি। আমরা জানি, যে সরণী আমরা আজ তৈরী করব, আগামীকাল, সেই পথকেই রাজপথ বলে ঘোষণা করবে, সেই পথেই পা বাড়াবে নতুনদিন। আর তাই চাকচিক্য নয়, আন্তরিকতাই আমাদের পুঁজি। এই কারণে, আমরা প্রতি সংখ্যায়, একজন করে কবির পাঁচটি করে কবিতা ছাপব, যাতে তার লেখার ঘরাণাটা সকলের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাকে সকলের সামনে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, আজ যে লোকচক্ষুর আড়ালে, কাল সে বহু আলোচিত হয়ে দাঁড়াবে।

আসুন, আমরা একসঙ্গে পথ হাঁটি, দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে বন্ধু, হাতে দিন হাত, পায়ে পা মিলিয়ে রাস্তা ভাঙ্গি, সেই রাস্তা, যা আজ কষ্টকর ও এবড়োখেবড়ো, কিন্তু আমাদের পায়ের তলায় আমরা আগুন নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম, এই শারদীয়ার পুন্যলগ্নে, এক মন্ত্রধ্বনিতে আকাশ ভরিয়ে দিয়ে “যা দেবী সর্বভুতেষু, বুদ্ধিরূপেন সংস্থিতা, নমস্তঃসৈ নমস্তঃসৈ নমস্তঃসৈ, নমহ নমহ, যা দেবী সর্বভুতেষু, বিদ্যারূপেন সংস্থিতা, নমস্তঃসৈ নমস্তঃসৈ নমস্তঃসৈ, নমহ নমহ , যা দেবী সর্বভুতেষু, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, নমস্তঃসৈ নমস্তঃসৈ নমস্তঃসৈ, নমহ নমহ ...”


বৈজয়ন্ত রাহা
সম্পাদক, সৌকর্য


সমর কুমার সরকার

আবাহনী


গিরিসুতা,হেমকান্তি,দুর্গতি নাশিনী,

হরপ্রিয়া,মহামায়া,গনেশ জননী।
পুত্র বীর কার্তিকেয় দেব সেনাপতি,
রূপগুণ ধন্যা সুতা,লক্ষ্মী,সরস্বতী।
মহাতেজাঃ দশভুজা,দশ প্রহরণ
শোভিতা,কেশরীরাজ ভয়াল বাহন।
দনুজদলনী,ভালে শোভে ত্রি-লোচন,
ষড়ৈশ্বর্য প্রদায়িনী,বন্দ্যা ত্রিভুবন।
আদিভূতা,সর্ব ভূতে শক্তি রূপে স্থিতা,
তমোগুণ বিনাশিনী,ভদ্রা,জগন্মাতা।
রূপ,যশ,জয় দাত্রী,অভয়া রুদ্রাণী,
ভক্ত বাঞ্ছা কল্পতরু,কৈবল্য দায়িনী।
দেব,দ্বিজ,শূর,নর,পূজে সর্ব জনে,
শারদীয় মহাপূজা অকাল বোধনে।



মেনকার আবেদন



কহিলা আনত স্বরে,মেনকা সুন্দরী,
শুন নাথ গিরিরাজ,মিনতি যে করি-
"বর্ষ আজি গতপ্রায়,অন্তরেতে দুঃখী,
কত কাল হেরি নাই উমা বিধুমুখী।
রূপে-গুণে শ্রেষ্ঠা উমা,রাজার ঝিয়ারী,
জামাতা লভিনু নাথ,মহেশ ভিখারী।
কটিদেশে ব্যাঘ্রচর্ম,শিরে জটাজাল,
ভস্মাবৃত সর্ব অঙ্গ,গলে নাগ মাল।
বৃষভ বাহন,কর্ণে ধুতুরার ফুল,
রুদ্রাক্ষ ভূষণ মাত্র,আয়ুধ ত্রিশূল।
শ্মশানে মশানে স্থিতি,ডমরু বাজায়,
ভূত প্রেত সহচর,লাজে মরি হায়!
একবার আনো উমা,করিতেছি পণ,
দিব না ফিরিতে তারে কৈলাস সদন।"



নবমী রজনী শেষে


নবমী রজনী শেষে,ঊষার লগনে,
মিনতি করিছে উমা নিশাপতি সনে-
"যেয়ো না বিদায় লয়ে,শুন নিবেদন,
তুমি গেলে গগনেতে উদিবে তপন।
নবমীর অবসানে,দশমীর প্রাতে,
প্রাণপ্রিয় পিতৃগৃহ হইবে ত্যজিতে।
জনম দুঃখিনী নারী পুরুষের বশে,
পিতা-মাতা ছাড়ি রহে পতির আবাসে।
বর্ষকালে চারি দিন পিত্রালয়ে স্থিতি,
পূরে কি মনের আশ ? কহ নিশাপতি।
দয়া করি দুঃখিনীরে,বিচর গগনে,
প্রাণ ভরি শেষ বার দেখি পরিজনে।"
এতেক কহিয়া উমা অশ্রুজলে ভাসে,
দশমীর বার্তা লয়ে দিবাকর হাসে।


পবিত্র সরকার

আগুন


পুড়িয়ে ফেলেছি বাড়িঘর, আর


পুড়িয়ে ফেলেছি গমখেত;
এখন আমার নাভির আগুনে
মশাল জ্বেলেছে ভূতপ্রেত।

দেশজুড়ে চলে আগুনের নাচ,

পৃথিবীর ত্বক অঙ্গার;
আগুন শুষেছে সমস্ত জল
সহস্রধারা গঙ্গার।

ও আগুন, , যা ,গিলে নে আকাশ,

সমুদ্র কর্‌ গ্রাস তুই,
সিংহাসনের ছাইগাদা হোক

নয়া শস্যের বাস্তু।


অর্ণব বিশ্বাস

পিঁপড়ের জাত


ছাদের ধারের কিনারা দিয়ে লাইন ধরে হেঁটে চলেছে, লাল পিঁপড়ের দল, কারোর মুখে বিস্কুটের টুকরো, কারোর মুখে লেবু পাতারটুকরো, কেউ কেউ আবার মুখে করে কালো ডেও পিঁপড়ের দেহাংশ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলেছে... ... ...


সমর্পণ


ওরাই এখন আমার সময় সুতো ধরে, উঠে আসছে... ব্রেনে, শিরদাঁড়া বেঁয়ে..., গুরু-মস্তিষ্কের ফ্লুয়িড-মেক্যানিসম ততোক্ষণে বুঝে নিয়েছে --- কতটা দৃঢ় তার পদচারণ...!

ধীরে ধীরে অসাড় হচ্ছি আমি... ... ... সুড়সুড় করে ওঠা ঘাড়ের কাছটা, অনায়াসে বশ মেনে নেয়ে... নত মস্তকে গিলে খায়ে...আজন্মের মতো... -- বিশুদ্ধ বিষ... !


নিংড়ে আমায় দেখতে পারো
রক্ত আমার বদলে গেছে...

আমার মুখের ক্যানাইল জোড়া হিংস্র ভদ্রতা...
আমার চোখে বি-রক্তহীন নিঃস্পৃহ ব্যস্ততা
আমার কাঁধে, আমার পিঠে, আমার বুকে হাড় পাঁজড়ে...
অসাড় বাতুলতা ।।

নিংড়ে আমায় দেখেই নিও...
রক্ত আমার বদলে গেছে ।


সেলফ রেস্পেক্ট


অন্ধকাম আর অন্ধকার... সুড়ঙ্গ খুড়ে খুড়ে খুজে নিচ্ছে আশ্রয়স্থল, মগজে এখন ঘিলু বলতে সুধুই আদ্রতা...
জোড়া ক্যানাইল জুড়ে কিছু স্বপ্নের দেহাংশ, গত রাত্রের... তাকে মুখে করে ছুটে চলাটাই এই মুহুর্তের হিংস্রতা ...

তবু তো পিঁপড়ের জাত... শীততাপনিয়ন্ত্রিত বলে কিচ্ছু হয় না ...

ভালোবেসে বিয়ে করা নতুন বৌটি পুরানো প্রেমিকার গন্ধ ধুতে ধুতে বুঝে নিচ্ছে ... সংসারের ঠিক কোন জায়গায় ফাটল ... শীতকাল আসার আগেই তাই মধুচন্দ্রিমা সেরে নিতে হবে... পিপঁড়েদের অজুহাতে আবার গলনাঙ্কের পরিধি ‘আন্ডার কন্সট্রাকটিভ’... বিনা অনুমতিতে যে কারুর প্রবেশ নিষেধ ।

কেলাসাকার বৃদ্ধ চাঁদ ... বহুকাল তাঁর নাব্যতা হারিয়েছে... আজ তাঁর কৌণিক মেটামরফসিস... পিঁপড়ে স্বভাব খুটে খায় রূপালী চাঁদের আদর ... ... ...


পিঠ জুড়ে নোনা মাটি, ধুলো-বালি
বুক জুড়ে শ্যাওলা গুমোট...
উদরে কলঙ্ক-স্তোক করিছে স্থাপন...
আমি মুখ দিয়েই করে যাবো কৃচ্ছ্র-সাধন ।


ছোট মুখে বড় কথা , স্বভাবে পিঁপড়ের জাত ... নমস্কার সংবাদ ... কভার পেজে এইবার থাকছি তো ... !?

কচি রেজা

কি যেন কবিতা

পাথর নড়ে উঠলে তাকে খেতে দিও, পেতে দিও হাত

নইলে সে তোমার দেহেই নখে করে নিয়ে যাবে ডক্টর জু'লজিস্ট ,
একবার,দু'বার,
গ্রাম-পঞ্চায়েত যাক, আকষ্মিক লাভা্র নীচে খানিকটা তার গাধার টুপি,
নিজের মেজাজ নোট খাতায় টুকে মনি বন্ধের ঘড়ির মত দেখি
আমি বিশ্বাস করি না, বিশ্বাস করি শ্লোলি কে যেন খেয়ে যায় পায়েস,

ছিটের জামা কিছু জানে, অর্ধেকটা নায়াগ্রা-ফলসের মতন,

আকর্ষন-আকর্ষন, আমাদের স্কুল দরকার, হাসপাতাল,
কৃষকের স্বতঃস্ফুর্ত ছেলেরা ষ্টেশনে নেমেই ঠেলার গাড়ির বাগদত্তা,
শৌখিন নাটকে অভিনয় করে করে করে করে বুদ্ধিমতীরা
সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের লাস্যময়ী---

আর আজ, আজ সব চোখকে বলে দিও দুঃস্বপ্ন হোক

শেষ ঘোড়া বিক্রি করে বলো, বাঁয়ে চলো।গাঁয়ে চলো।
ভাঙা সূর্য, রাঙা কাচ কি বোকা আজও চারপাশ। আজও ইঁদুর। আজও চাষী
আজও পুঁজিবাদী, আহ্লাদি পা দুম দাম, দুম দাম
জবরদস্তি কেউ টলষ্টয়ের পা রেলের চাকায় করে পাঠিয়ে দাও সাইবেরিয়ায়


পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত

যে আমার কবিতা পড়েনা


ধেনোমদে আকাশ মদির আমার কিবা করার আছে কাদম্বরী ও কাদম্বরী

খোয়াব আমি দেখছি না তো খোয়াব দেখা আমার সাজে ভাটিখানায় যাচ্ছি না হায়
তোমার রঙে রঙ মেশালাম তোমার বায়োলজির কোষে
তৈরি সাদা এক পিপে মদ ফ্রিজ খুলে দাও আইসকিউব
ঘুমিয়ে আছে শরাবখানা তোমার ঘুমে এসকালেটর এক বিলিয়ান ইউরো ডলার
আমি কি করবো বলো মদের হদিশ পাচ্ছি না যে
তোমার পিপে উষ্ণ ঘোরের মধ্যে থাকা
আরব রাতের পাঁচমিশেলি সফরনামা ও ইলাহি ঝিমকিনি দাও ইন্দ্রপুরীর পয়গম্বর
চাঁদের থেকে কেয়ানির্যাস তিক্ত কটু মদের শিশি আলগা রাখো মউল চুল্লু মদ বিলাতি
ছাইভস্ম বলতে পারো আখড়া আবেগ ঘুরতে ঘুরতে শহরটাকে বুঝতে পারো
সময় ফুরিয়ে আসছে দেখো তত্ত্বেই তবে মুক্তি এলো যুক্তি সাজাও যুক্তি সাজাও
ঘুমিয়ে আছে শরাবখানা ঘুমিয়ে আছে শরাবখানা তৈরি সাদা এক পিপে মদ
ফ্রিজ খুলে দাও আইসকিউব প্রত্যাশিত একটি নারী আর বাকীরা ওমর খৈয়াম
পাচ্ছে না তো আলোর ভ্রমণ কাব্যপরিক্রমার ছোঁয়া
ও সোনালি অতীত আমার জীবনব্রত ফুরিয়ে গেছে
মনের শান্তি তার কে আছে মনমরা এই কবির চিঠি
পড়ছো তোমরা
মদ দিয়ে যাও
বাংলা বোতল দীপশিখাদির চাঁদপানা রঙ
ট্রয়ের হেলেন হামবুর্গ থেকে মদ পাঠালো
জার্মানিতে ভোদকা রাখা আমার জন্য
কবির কতো জায়গির বলো
প্রেমের পদাবলীর পদ্য
বিষাদ রঙের সহজ গদ্য
আর কি আছে
শিল্পী যোগেন চৌকোনা তার পটের বিবি
মদ পাঠিয়ে দিলেন আমায়
ফুলগুলো সব অস্তগামী বিরল প্রজাপতির ডানা
আমার সঙ্গে আঁকলো বসে মদের বোতল
আলঙ্কারিক মুখগুলো সব ক্যাশ ভেঙেছে মদের জন্য
ছিনিয়ে নিলাম শীতকাতুরে
সে সব মহা মদের গাড়ু
জীবন তোমরা ঝলকানি দাও
মদ মিশিয়ে পদ্য লেখো
অনাসক্তি ভীষণ ভালো কিন্তু বলো মদ ছাড়া কি তন্ত্র খোলে
শুঁড়িখানার প্যাশন নানা রঙের হলো
এলোকেশীর ফ্যাশন হলো বিউটিটিউটি
মোহময়ীর পরিপূরক
তৈরি সাদা এক পিপে মদ
ফ্রিজ খুলে দাও আইসকিউব
আমার ফ্রেমে ফুটে উঠবে ইলেকট্রনিক হট্টমেলা
জাহানারার হালকা রঙে উড়তে থাকা
অবাক হয়ে যাচ্ছে সবাই
মদের জন্য হাতবদলের নিলাম হলো
রুপকথা সেই চিচিং-ফাঁকের অনেকগুলো দরজা খোলা
চুলের রিবন উড়তে থাকে
আফোটা ফুল জীবনব্রতের কবির প্রেমে চিঠির পরাগ
নিলাম হয়ে যাক না চলে বাহুবন্ধন চুমুর দাগ
পথ চাওয়া আর থাকবেনা তো পথের মহা চুকলিবাজি
কবির উপযুক্ত মদে কে মেখেছো মাথারখুলি
ঘুমিয়ে আছে শরাবখানা আদব-কায়দা কবির বাণী
সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কেন প্রেম তো নিজেই হিমের রানী
মোটা তুলির এফেক্ট চাঁদে বিয়ার খেতে পারেন আপনি
সিডনিতে আজ সন্ধ্যা হল কাল সকালে ফেয়ারওয়েল

রত্নদীপা দে ঘোষ

পনেরো লাইন হরিণ

হিল রিসোর্টে হরিণের সিগন্যাল “ দা রেস্ট ইস সাইলেন্স ”

প্রেম এবং যৌনতার মাঝখানে দু বর্গফুট চাঁদিয়ালহরিণ
সপ্তাদশী হরিণ ওড়ে বাঘের ইয়ার্ডপাঁচিল টপকে
আবাসনরোদে অস্থির হরিণের আত্মরতিকৌশল
হরিণচোখে লাট হওয়া ভালোবাসার প্লাস্টিক ইমালসন
রূপকথার ফুটনোটে লেখা হরিণের দ্রাবিড়লিপি
তুঙ্গভদ্রার হরিণআলখাল্লায় ভোকাট্টা ঢেউ
যুবকের বুকে লাফালাফি করে মদ্যপ নক্ষত্রহরিণ
হরিণ উন্মাদ বালকের পোষা ফিলোজফার বন্ধু গাইড
হরিণের গায়ের ইস্পাত কখনই মানুষ ছুঁতে পারেনা
রুইতনের হরিণরা সরগম থেকে শিখে ন্যায় সমুদ্রমাঞ্জা
হরিণস্টেশন পেরোনো ট্রেন থেকে বটঝুরি নামাতে ব্যাস্ত ইশ্বরট্যুরিস্ট
হরিণের মোবাইলবার্তায় টারকোয়াজ ব্লুভোর
গল্ফবাগানে চকচক করছে বেশুমার অগ্রগতির নীলহরিণ
চীনেমাটির হরিণের গলায় “ ভেঙে দাও , গুঁড়িয়ে দাও পার্লামেন্ট ”

ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

পাঁচটি কবিতা


কৃষি কবিতা



চাঁদ জাগা রাতে
খুলে ফেলো সব পোষাক।
আলোকিত ক্ষেত হয়ে ওঠো শুধু।
সমস্ত সুপ্তি ঝেড়ে ফনা তোলা বাঘ হয়ে যাবো আমি।
চেতনার হাল শক্ত মুঠিতে ধরে
চষে যাবো অবিরাম।
অবিরাম আদরের সার
ছড়িয়ে যাবো সমস্ত ক্ষেত জুড়ে।

একদিন, এইসব কৃষিকাজ শেষে

যখন তৃষ্ণার মতো,
বীজ হয়ে ঝরে যাবো শরীরে,মননে,
তুমি কোন একধানক্ষেত-কবিতা হয়ে
ভেসে যেও সমস্ত দুনিয়ার আকাশে।


রাতের কবিতা



শরীরময় আকাশের রূপ নিয়ে
কবিতার রাত আসে ঘরে।

নগ্ন-অবোধ শিশুর মতো

অবাক কৌতুহল জুড়ে,
শিরোনাম ছুঁয়ে দেখেছি।
তীব্র আবেগে কবিতার আকাশ জুড়ে
খুঁজেছি অপূর্ব ধ্রুবতারা।

অনন্ত সময়ের শেষে যখন

অবসন্ন ঘুমিয়েছি শিশিরের বিছানায়,
তুমি দুহাত ভরে ছিটিয়েছ
নক্ষত্রের ছন্দময় সব আলো।

প্রেমে প্রেমে ভোর হয়ে গেছে

সমস্ত রাতের কবিতা।


কবি


এক লক্ষ 'সত্যম,শিবম,সুন্দরম' পেরনোর পরেও,
দেখো এখনো হৃদয়ে রক্তের বৃষ্টিপাত।
চোখ টলটলে দীঘি।
তাই খুব গোপনে একদিন
কান্না আর রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাবো।
সময়ের কাছে গচ্ছিত রেখে যাবো এক নিস্তব্ধ অগ্ন্যূৎপাত।


ব্যাভিচার ও আমি


শরীরের কবিতাকে শাবলের গুঁতোয় ক্রমাগত চুরমার করে
কবিতার শরীরকে ছুরিকাহত করে চলেছি।
এখনো ঠিক জানি না,
ব্যাভিচার কাকে বলে?
নিষ্ঠুরতম স্নেহে,যতনে পরাচ্ছি
কবিতার শরীরে, শরীরের কবিতার জামা।
সন্দেহ থেকে যায় তবু ব্যাভিচারের সংজ্ঞায়।
ব্যাবহারিক জীবনযাত্রায়,
শুধুমাত্র রাত্রেই দরজা ঠেলে ঢোকে
কবিতা আর শরীর।
রাত হেঁটে হেঁটে যায় গভীর রাতের দিকে,
ভোর হয়।দিন। রাত্রির প্রতীক্ষা।
আয়ত্তে আসছে না তবু ব্যাভিচার।


তোমাকে


জানি লিখব দেশলাই কাঠি ,
জ্বলবে আগুন।
ধক-ধক কান্না লেপে দেওয়া শব্দের গায়ে
লিখব বিপ্লব গোনা প্রহর।
জুবুথুবু পড়ে থাকা শিকড়ে
জুড়ে দেব দিগন্ত উরানের ডানা।

তবু যদি বল কবিতার নাম হবে ভালবাসা,

কান্নার আগুন পেরিয়ে একদিন সব শব্দরা বেঁচে যাবে।


বৈজয়ন্ত রাহা

আঠারোশ’ শতকের লাতিন আমেরিকার কবি
কনরাড আইকেন এর ‘A for Alfa, Alfa for A’
ভাবানুসরণে বৈজয়ন্ত রাহা



এইভাবে সন্ধেরা পলাতক ফেরারীর মতো

মাঠ ভেঙ্গে, ঘর ভেঙ্গে জ্যোৎস্নাকে নিয়ে ফিরে ফিরে আসে,
ঘাসজমি পড়ে থাকে লুব্ধ চিতার মুখে--
যেনো হরিণের মাংসের ভোজ হবে বড়ো...
আমাদের গ্রামগুলি এভাবেই পড়ে পড়ে থাকে,
যেন কোন নির্লজ্জ কিশোরীর ঠোঁটে
বাধাহীন চুম্বন-নেশায় ...শেষরাত ডুবে গেছে,
চাঁদ নেমে আসে
ঘরে ঘরে উঠোনে , দাওয়ায়...

জটিল ছায়ায়, সপ্তশাখা জুড়ে কোন মর্মর-ধ্বনি

প্রাচীন গাছের ঝুরি নেমে নেমে যায় কবিতার সপ্তসুরে,
অতলে মায়ায়, খুঁজে আনে ফেলে আসা জন্মের যোনি;

ছায়া দীর্ঘ হয়--অলিন্দ-প্রাঙ্গণ জুড়ে—

দিন তবে শেষ হল;
সুদূর পাখির মতো—সোনালি ডানায় সূর্য অস্ত যায়,
আকাশের নীলে মিশে , কত নীলে মিশে, তারারা কাঁপে
(গত বসন্তে আমার বয়স কত ছিল?)
দিগন্ত রেখায়
সমস্ত ভুবন যেন গলে গলে মিশে গেছে রক্তচ্ছটায়,
আমি শুনি
ভাসানের গান
আর, সন্ধে নেমে আসে।

শব্দহীন পদক্ষেপে আমি দুলে উঠি

সন্ধে আসে আমার কুটির ঘিরে –আমার ভিতরে
প্রবল ভাঙ্গনে, নিঃস্তব্ধ মিশ্রণে
ভেঙ্গে ফেলে স্বপ্নের নিকোন উঠোন,
আমার নিজস্ব সূর্যাস্ত, আমার পৃথিবী
যেখানে পথের শেষ, অন্য পৃথিবীর শুরু
যেখানে প্রেমের শেষ অন্য কিছুর শুরু—
সেই আলো--
হয়তো বা যার বুকে আর কোন রাত্রি নেই।

এইবার চাঁদভেজা হাতখানি তোল

সূর্য পাটে যাক,
এইবার চোখ তোল – রাত্রি গাঢ় হোক;
তারপর বিলুপ্তির ছায়া আরো ঘন হোক
সঙ্গীতের মতো, প্রাচীন উদ্ভিদের মতো,
আচ্ছন্ন করুক প্রজ্ঞা, আমাদের স্নায়ু, আমাদের সত্তা
বিলম্বিত প্রলয়ে...

প্রিয়তমা,

ধ্বংসের ঠিক আগে
একবার চাঁদখানি দেখ--
আমি ঐ চাঁদ হব,
মেঘের চোখের মতো, বিবর্ণ প্রেমিকের মতো,
তুমি যদি দেখো, আমি হব পথভোলা অস্থায়ী আলো
সন্ধের ডালপালা বেয়ে ক্রমশঃ কঠিন হব, ধাতব...
গাছের উপর, ঐ কুমারি পাতার উপর
রাত্রি হব, ঘনঘোর বাতাসের নীল্ গন্ধ ...
আভা হব, এতটুকু আলোকের আভা,
আমি ভালবাসা হব, বিগত শতকের...

একবার সন্ধে হয়ে ছুঁয়ে যাও,

তোমার শরীর জুড়ে রাতজাগা নদি হয়ে ভাসাব পৃথিবী।
একবার।

বুলা ব্যানার্জী

তুমি

তুমি আমার
কিচ্ছু হচ্ছেনা জেনেও
শখের কবিতা লেখা
তুমি আমার
আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো
তুমিহীন অসহায় অস্বস্তি
তুমি আমার
শরীরী মরুভূমির মাঝে
একখন্ড সবজে মরুদ্যান
আমার কবিতার দুর্বোধ্যতার মাঝখানে
লুকিয়ে থাকা স্বচ্ছ অবয়ব
আমার শিউলি ঝরা এক-রুমাল ভোরও তুমি
এবং সন্ধ্যার স্তনসন্ধিতে টিপটিপ জোনাকির তিল
তোমাকে ভুলি কি করে!
পা টিপেটিপে স্বপ্নে এস
ঘুমের সাথে অনর্থক কায়াহীন খুনসুটি কর
তরঙ্গহীন বাস্তবের প্রশস্ত বাহুতে বাঁধো
রঙিন স্বপ্নিল আবেশ
সুতীব্র অভিকর্ষে,
আমাকে তোমার মাটির সাথে
অ-কৃত্রিম ধরে রাখো
তুমি অবিরত আমার অলীক কল্পনা হও

হীরক মুখার্জী

অহেতুক যত কবিতা


একটা সূর্য্য বৃষ্টিভেজা কয়লা আঁচে নিভুনিভু,

উনুনের গা বেয়ে কিছু জঙ্গুলে আগাছার
হলুদ পাতায় অনুজ্বল জোনাকী ডানা ঝাপটায়,
তবু রোজ যখন বিকেল মরতে বসে,

আমি বেঁচে উঠতাম

আকাশী ওড়না সাইকেলের চাকায়


জড়িয়েছে কতবার, হিসেব নেই

অঞ্জলীর ফুল নিছকই দুষ্টুমিতে

লক্ষভ্রষ্ট কতবার, তারও হিসেব নেই

তারপর একদিন গাজন এল, অনেক লোক হয়েছিল

ভীড়ে হারানো শিশুকে দেখেছি "মা-মা" করে কাঁদতে

যে মাঠে মেলা বসত,


মেলা শেষ হওয়ার পর মাঠটাকেও কাঁদতে দেখেছি
বাঁশপোঁতা গর্তগুলোও ভরাট হয়ে গেছে উনুনের মাটি দিয়ে,
সব চাল নাই'বা ফুটলো !

রামধনু সিঁড়ি বেয়ে মেঘের ভেলায় ভেসেছিলাম, হঠাৎ বৃষ্টিতে

সব বর্ণান্ধ, ধুলো'চাপা !
সূর্য্য এখনো পুব থেকে পশ্চিমের ডেইলি'প্যাসেঞ্জার

সাতটা'চৌঁত্রিশে ঊষা ফোটে, বেশ বেলা করেই

'লোকাল' চাঞ্চল্যে সে ছবি দু'মিনিটেই মুছে যায়
হাতছাড়া রাঙ্গাজবা ধীরে ধীরে পুড়ে যায় রোদে

আর অহেতুক যত কবিতা !


ভুলো


দাদা, আমি বড় বেশী ভুলো

দুদিনেই ভুলে যাই সব,
কে আমার পাশে কাল ছিল
প্রতিবাদে কে ছিল সরব;

কাল তুমি বিপদের সাথী

আজ তুমি নিজেই আপদ,
কাল ছিলে কলিজার বাতি
আজ তুমি ঘৃন্য শ্বাপদ !

উপকার?? করেছিলে জানি,

এতো দেখি মুশকিল খুবই !
প্রকাশ্যে প্রিয় বলে ডেকে
আড়ালে কি গালি দেব ভাবি !

দাদা, আমি সব ভুলে যাই,

সমব্যাথা, অশ্রুর ঋণ,
দুঃখের বাঁশুরী বাজাই,
এভাবেই কাটে প্রতিদিন !


নাশিদা খান চৌধুরি

তোমাতেই থাকি


ভেবেছিলাম সাগর হয়ে জন্মাবোনা,

নোনা জলে স্বাদ নেই
অথচ, সেই হয়ে এলে আমার চোখে।

চাঁদ হতে চাইনি

অমাবস্যায় হারানোর ভয় ছিল,
পই পই করে ঠিকই খুঁজে পেয়েছো তোমার চোখের তারায়।

ভেবেছি লোহিত সাগর হয়ে তোমার রক্তে ঠাই নেব,

আমায় অস্বীকার করার জো কোথায়?
অথচ দেখো, সিঁদুর হয়ে তুমি উঠলে আমার কপালে।

যদি সুযোগ পাই,

হতে চাই তোমার জীবনের পেসমেকার।
বেঁচে থাকার জন্যে অন্তত
আমাতে তুমি নির্ভরশীল হবে।

আমি তাই হতে চাই-

বাইরে থেকে তোমার পুরোটাই আমার নিয়ন্ত্রণে থাকুক;
ঠিক ততোটাই
যাকে তুমি ছুঁয়ে না থাকলেও
সে তোমাতে বাস করবেই।


নৈসর্গিক মিলন


স্পর্শেই মিলনের ব্যপ্তি?

পুরুষ ও প্রকৃতির মিলন নৈসর্গিক।
সকল অহংকার ত্যাগে,
নিরহংকার পুরুষ প্রকৃত মিলনে ব্যপ্ত হয়।

নারী ও পুরুষের মিলন নিরলঙ্কার,

অনুভবে উচ্ছলতার বিকাশ ঘটে।

রতিমিলন সব নয়

সেতো শুধু অল্পবিরাম।
ভালোবাসা এক বিরামহীন পথ,
সে পথে হেঁটে চলে পুরুষ ও প্রকৃতি,
অবিরল, অন্তহীন।
অলংকারহীন অহংকারহীন বৈভবে
প্রকৃতির মিলন হয় পুরুষের সান্নিধ্যে।

অনিবার্য এ মিলনে সঙ্গম প্রকৃত নয়

দুর হতেও মিলন সিদ্ধ হয়।
পক্ষীর ঠোঁটের বহনে যেমন
প্রকৃতিতে বীজের অঙ্কুরোদগম।

প্রেমের আধারে পুরুষ স্ত্রীর মিলন ঘটে

সঙ্গম যেখানে অনিবার্য নয়।
আদি সৃষ্টি এভাবেই সম্পন্ন
পুরুষ ও প্রকৃতির পরিপূরক।
এক প্রকৃত প্রেমের পরাকাষ্ঠা
এক আরাধ্য অমোঘ মিলন।

রুদ্রশংকর

হলুদ পাতার পিরামিড


শরতের শেষ মেঘে প্রত্যাশা হয়ে উঠল সবুজ

বুকপকেটে সেফ্ টিপিন বিঁধিয়ে
মেয়েবন্ধুদের মুখে তুলে দিই নিষিদ্ধ আপেল
অমনি দেশলাই কাঠির মতো আবেগ নাচতে নাচতে
ঢুকে পড়ে ল্যাম্পপোস্টের জ্যামিতির মধ্যে

#

এ’সময় সাধারণত পোষমানা স্পেনিয়েলটাকেও
তুমি ক্ল্যাসিকাল আদর করো
প্রশ্রয় দাও নিজের বুকে ঝাঁপানোর
রাতের বেড়ালগুলো, যারা অস্পষ্টভাবে লুটোপুটি খায়
তাদের ডেকে নাও আমার জেরক্স কপির সাথে
আর নিপুন মশারা চারপাশ থেকে আমাকে খুলে
ঘুরিয়ে দেখায় মেরুচুম্বকের দেশ

#

তারপর গর্ত থেকে ওঠে হলুদ পাতার পিরামিড
যুবতী মাছেরা আমাকে নিয়ে যায়
শরীরে গোপন নীল অজস্র কবিতার ভিতর
দেখতে দেখতে ঘুম আসে
আমি পেতে রাখি বহুকালের পুরোনো বিছানা ।


মেটামরফোসিস


পৃথিবীকে আরো বেশী গোল করেছে

প্রজাপতির মেটামরফোসিস
টোকিও থেকে আটলান্টা
আটলান্টা থেকে টোকিও
হাত ধরাধরির পর পাঁচ আঙুলে
চেরি-ব্লোসামের রাগ ঢুকিয়ে দেয় সায়াকা
মাঝের দু’বছর ফুজিয়ামার উষ্ণতায়
প্রতিমাসে একটি পূর্ণচাঁদ ই-মেল আসত
তার উত্তরে আমিও গুটি কেটে -
উড়িয়ে দিতাম নৈঃশব্দ্যের ই-মেল
নিস্তব্ধতা মাঝে মাঝে এলে ভাল লাগে ৷

রূপময় ভট্টাচার্য্য

তিনটি কবিতা


(১)

হাঁটতে গিয়ে রবিবারের দুপুর

জড়িয়ে গেল মনখারাপের গায়ে-

প্রাগৈতিহাস জানলা খুলে দিল

টেথিস জমে উঠলো হিমালয়

রাস্তা ফাঁকা, শানিয়ে নিচ্ছে আরাম

ট্রামলাইনও বেবাক হেরিটেজ

ফ্ল্যাটের বুকে সাজানো কিউরিও

সঙ্গী যখন রামকিঙ্কর বেজ

দু'চোখ মজে বিশ্বায়নের ফাঁদে

ভার্চুয়ালি সম্পর্কের ডাকে

হিসেব বুঝেই রবিবারের দুপুর

বুকশেল্ফে আবেগ তুলে রাখে

কাশের ঝোপে পুজোর বিষণ্নতা

গেরুয়া রং বলে উত্তরীয় -

অমর রহে অকালবোধন শরৎ

জীবন এবং রবিবাসরীয়


(২)

প্রতিটা চুম্বনের আগের মুহুর্তেই সময় থমকে যায় - সৃষ্টিনিয়ম উপেক্ষা করেই


(৩)


প্রতিটা শব্দই কিছু বাড়তি অনুরণন দিয়ে যায় -
কিছু উদ্ভাস ,কিছু পাগলামি,কিছু এপিকস্মৃতি

আর সবটুকুর শেষে যতিচিহ্ন

বসাতে বসাতে বুঝতে পারি

আসল কথাগুলো অনুপস্থিত



সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

দুটি কবিতা


(১)

রাতের কলকাতা শহরে সর্বত্র শুনছি ত্রস্ত পদধ্বনি

অচেনা মুখের অলিতে-গলিতে খুঁজে পাচ্ছি -
দেখতে পাচ্ছি -
ক্লান্ত নাগরিক জীবনে ,অসংখ্য মুখের সারিতে !

বুকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সুখের ব্যাথার মতো

জন্ম নেয় - ভালোলাগা !!

সেই ভাললাগাই বয়ে আনে তার বার্তা ।

মুখ আছে -

কথা নেই !
ভাব আছে -
ভাষা নেই !
আমরা মরে যাইনি কিন্তু ঠিক বেঁচেও নেই !!

সেই না-বলা কথা, না-থাকা ভাব ,তীব্র প্রাণের স্লোগান
তোমাতে ঋদ্ধ হয় !
যেন শহর জুড়ে হঠাৎ নামা বৃষ্টির ফোঁটাও নিয়ে আসে আগমনী -
সমস্ত আকাশ-বাতাস জুড়ে একটাই স্বর বাজে -

সে আসছে !! সে আসছে !!

তুমি আসছ !! তুমি আসছ !!

সব টুকরো অনুভূতিগুলো জাল বুনে হয়ে ওঠে -
আমার 'না-হয়ে-ওঠা' পরবর্তী কবিতা !!


(২)


এই বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুরে

হঠাৎ যেন খুঁজে পেলাম আমায় ।

একঝাঁক অবান্তর স্মৃতির মধ্যে

আমার মুখোশ-ছাড়া মুখটা
ধরা পড়ে গেল ।

আয়নার সামনে দাঁড়ালেই কি নিজেকে দেখা যায় ?

একটা আলো দরকার
ভীষণ সাহসী এক আলো ।

শেষ বিকেলের রোদ্দুরের মত আলো ।

তোমার মুখে পড়া কনে-দেখা আলো ।

শান্তনু পানিগ্রাহী

আমি আগন্তুক


এখন আমার কব্জি ডোবা,শব্দ মেলার রাতে

ছড়িয়ে একা সব করুণায়, কৌতুহলের পাশে,
মুঠো ভরা মাতাল স্রোত, লুকিয়ে আছে হাতে
হারিয়ে যাবো ঢেউ এর দিশায়, রসায়নে মিশে।

দৃষ্টি জোড়া ভরা শ্রাবণ দুলছে তোর গালে

ভাদ্র খরা শুকিয়ে মরা, আমার কুঠির ঘরে,
সুস্থ সুজন প্রেম প্রিয়জন,বর্ষা পেখম মেলে
আমার আবার স্বপ্ন পালায় মৃত্যু নিঃস্ব করে ।

চাইলেই ডুবে যাবো, দৈন্য আমন্ত্রণে

আঁজলা সুভাসিত,পিপাসা জলের টানে,
ডাঙায় আমি ডানায় ভাসি, ঘূর্ণ বিচরণে
সাক্ষাত রুপ খুঁজি, ভৌগলিক ভ্রমণে ।

ঘুমে দের কলিঙ্গ বাসনা বিছানায় জেঁকে

অবিচ্ছিণ্ণ বাসি রাতের,প্রবঞ্চনা নাম রেখে,
ঝিঁঝিঁ দের ঊদ্দাম জ্যোৎস্না পাতা রাতে
জীবন দ্বীপে জল ছবি আমার লাভা আঁকে ।

টলছি সোহাগি আমি যুক্তির ঝোড়ো স্রোতে

আলো নেভা গলিদের, ঠুংরি নৃত্য দেখে,
আকাশে আলো জ্বালো,না হয় মুছে যাবো
সলতের তেল শুষে, আবার নিভে যাবো ।

স্নেহাশীষ ব্যানার্জী

শালিক


(১)

একবার শালিককে প্রশ্ন করেছিলাম ,
“বেহিসেবির মত উড়িয়ে নিয়ে যাবি একজনকে ?”
শালিকটা বোবার মত হেসে
উড়েছিল আপন মনে ।
১১ বছরের একটি মেয়ে -
আমাদের বাড়িতে বাসন ধোয় ,
ওর চোখের স্বপ্নগুলো এখন
সাদা হয়ে ঠোঁটে জমে আছে ।
শালিকের মত বেহিসেবি নয় ও ,
মাস গেলে মাইনেটা ঠিক হিসেব করে বুঝে নেয় ।
একবার ওকে ডেকে বলেছিলাম
“এই মেয়ে উড়তে পারিস, শালিকের মত ?”
ও অবাক চোখে আকাশ দেখেছিল ,
যেন ওর ডানা দুটোকে অভাবে বেঁধে
ওকে আমরা বন্দী করেছি ,
ওর জোড়া পায়ে শিকল বেঁধে –
ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে দিয়েছি সংসারের নিয়মে ।
চাল ছড়িয়ে শালিক ডাকি ছাদে ,
মেয়েটাকে ওড়াতে পারিনি পাখীর মত ,
তাই শালিকদের বলি , “মেয়েটার বন্ধু হবি ?”
শালিকগুলো নীরব হয়ে ডানা ঝাপটায় !
১১ বছরের মেয়েটির বিয়ে হবে সামনের মাসে ,
বাসন ধুতে ধুতে ফুঁপিয়ে কাঁদে মাঝে মাঝে ,
আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে ।


(২)

বিয়ের দিন বিষ খেয়েছে মেয়েটা ,
এখন সে ছাই হয়ে আছে খেজুর তলা শ্মশানে ।
এখন ছাদে চাল ছড়িয়ে শালিক ডাকলে –
একটা নতুন শালিক রোজ আসে ,
তারপর উড়ে যায় বেহিসেবির মত –
দূরে, অনেক দূরে ।


আলোর পথযাত্রী


ল্যাম্পপোস্টের আলো কুড়িয়ে হাতের মুঠোয় পুরে রাখে রাস্তার ছেলেটি ,

তবুও আঁধার ঘোচে না ওদের ,
নিত্য দাম বেড়েছে জিনিসের ,
কিন্তু ভালবাসাটা এখনও কম দামী ।
তাই আলো দিয়ে ভালোবাসা কেনে ওরা ,
বর্ষার দিনে বটের তলার ভালোবাসা ,
ক্ষুধার দিনে পাড়ার নেড়ির সাথে পাতা ভাগের ভালোবাসা ,
আর গভীর রাতে ঝলমলে রাস্তার ভালোবাসা ।
সূর্যের আলো ধরতে পারে না ওরা মুঠোতে ,
রাস্তার ল্যাম্পের ধার করা আলোতেই জগৎ চেনে এক এক করে ।
সামনে ধর্নামঞ্চে কত ‘আলোর পথযাত্রী’ –
একের পর এক আসে আর বক্তৃতা দেয় !
হাততালির ঝড়ে কেঁপে ওঠে ওদের বুক ;
ধর্নামঞ্চের রঙ বদলায় ,
সূর্য ধরার স্বপ্ন দেখায় আরও এক দল,
তারপর তারাও চলে যায় মহাকরণের ফাঁক ফোকরে ।
তবুও হাতের মুঠো খোলে না রাস্তার ছেলেটি ।

তারপর –

যেদিন ঈশ্বর এলেন ,
সামনের মসজিদটা রাম না রহিমের
স্থির করে দিলো সুপ্রিম কোর্ট ,
মুঠো খুলল রাস্তার ছেলেটি ,
মানবতার সিঁড়ি বেয়ে সূর্য নিয়ে এলো মুঠোয় করে
তারপর ছড়িয়ে দিলো ধর্মের শাখা-প্রশাখায় ,
অন্ধকারে আলোর পথ দেখল স্বয়ং ঈশ্বর ,
আগুন রাঙা নতুন দিনের আলো ।

এখন -
রাস্তা ফুঁড়ে ভাষণ ভেসে আসে চারিদিক থেকে ,
ইলেকশনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে কলকাতা পাড়া ,
সূর্য ধরে মুঠোয় পুরে রাখে রাস্তার ছেলেটি ,
কমদামী ভালোবাসা কেনে সে আলো দিয়ে ,
‘আলোর পথ যাত্রী’ রা উবে যায় ইলেকশনের পরই ,
রাস্তার ছেলে ভালোবাসা ছড়িয়ে আসে
চোখের জলে ভেজা অলিন্দে অলিন্দে ।
বক্তৃতার ঝড়ে নিভে গেছে রাস্তার সব বাতি ,
শুধু রাস্তার ছেলেটির মুঠোয় ধরে থাকা –
সূর্যটা কখনো নিভবে না ।

সুদেষ্ণা ব্যানার্জী

ব্যাস্ততা জীবনের কান্না


ব্যস্ততা!
ছোট্ট শব্দ—কিন্তু লঘুলম্ফের সাগরপার!

ট্র্যাফিক সিগন্যালে গাড়ির লাইন,

ফুটপাথে মানুষের ঢল
ঘুর্ণনে , সরলরেখায় ভেসে চলে।
শেষ পর্যন্ত কোথায় যাবে?---নিজেরাই জানে না!
শুধু এইটুকু জানে, তারা ব্যস্ত।

আগে যেতে হবে...আরো আগে...

নক্ষত্রসমুদ্র, আলেয়ার ছায়াপথ পেরিয়ে
যেতে হবে আকাশের ওপারে।
ক্লান্তি নেই, হাঁপিয়ে ওঠা নেই
আছে শুধু অসীম ব্যস্ততা!

অফিসের চাপরাশি বলে-‘ বাবু ব্যস্ত আছেন...’।

টেলিফোনিক স্বয়ংক্রিয় অপারেটর জানায়-
‘অল দ্য রুটস অব দিস নেটওয়ার্ক—ইজ বিজি’...।
বিজ্ঞাপনের গর্বিত জননীর ছোট্ট শিশু সদম্ভে বলে—‘আমি ব্যস্ত-ও-ও-ও’।
সৃষ্টি নেই, স্থিতি নেই, প্রলয়ের মত
অকৃত্রিম ব্যস্ততা!

যদি এমন হয়?

যদি কোনদিন মেপে নিতে চাই ব্যস্ততার স্রোতে
কটা ঝিনুক ভেসে এলো তীরে!
...দেখতে চাই ব্যস্ত জীবন কতটা আয়ু
অজান্তেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কালের ভাসানবেলায়...
বসতে চাই মনের মুখোমুখি,

মন বলে-‘আমি ও ব্যস্ত’!

পরে থাকে শুধু শূন্যতা!
আমি আর উজাগরী একাকিত্ব সামনা সামনি!

বাকি সবাই বড় ব্যস্ত...

...বড় ব্যস্ত...!

সুমিত রঞ্জন দাস

অসমাপ্ত 

ঝাড়লন্ঠনের ঝিকিমিকি
আমি দেখেছি,
দেখেছি সাঁঝবাতির চাঁদ
আসমানি জলছবিতে;
উঁচুনীচু পথঘাট
ফেলে যাওয়া কালো রাত
পেরিয়ে এসেছি আমি
শতাব্দী পথে হেঁটে হেঁটে
চকমকি ঠোকা আগুনে পুড়িয়ে মানুষ
নরকের হাটে গুনেছি অতীত
মাছরাঙা পায়ে
একাকী বাস্তু ঘাটে
যমযন্ত্রনা পানে শান্ত করেছি আমি
অন্তরাত্মার রাহু ।

এখন বসে আছি,

তাম্বুলপাত্রে একটুকরো বিসর্গসুখের আশায় ...

তপব্রত মুখার্জী

তিনটি কবিতা


(১
)

পাওয়ার রঙ নেই কোন, না পাওয়াদেরও নেই...

আমাদের চোখের তারা বদলাতে বদলাতে এখন বিকেল, সন্ধ্যেরাত কিংবা...
থাক। কে আর সময় খোঁজে...

আমরা তো খুঁজে নি সঙ্গ, অনুসঙ্গ, দোষ বা একলা

বাকিটা চলে যায়।

বালিঘড়ি।

একটা কাঁচের মোড়ক পেরিয়ে গেলে ধুলো। তার পাড়ে শুধু দু-একটুকরো বিশ্বাস...।।



(২)

বলার কথা প্রিয়তমেরও জানা

বলার কথা আমি ও তুমি জানি
আকাশ জোড়া নীল যে আছে থেমে
ভুবনজোড়া প্রাণকে স্বপন মানি

বলার কথা সবুজ পড়ে নি কো

বলার কথা সব যায়নি শোনা
পড়ে নেওয়ার ভাষাও ওই ঠোঁটে
বলার কথা আজও হয়নি জানা

শোনার দিন থেমেছে দূর পারে

পারের হাওয়া এখনও কারে খোঁজে
বলার কথা তোমার আমার মাঝে
রূপকথাদের ঘুমটি ভাঙ্গায় ও যে

বলার কথা চুপকথাদের জানা

তবুও কথা শুনেছি ভুল করে
আমার কথা তোমার ঠিকানাতে
আজও যে তার স্বপন ঘর খোঁজে।।


(৩)


জীবন, কিংবা বেঁচে থাকা বিষয়টা আসলে আপেক্ষিক... অনেকটাই বানান ভুলের মতো...