সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

সম্পাদকীয় - ১ম বর্ষ, ৫ম সংখ্যা

সম্পাদকের কলম থেকে


প্রিয় সুধীবৃন্দ



এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে আমরা প্রকাশ করতে চলেছি আমাদের এই সংখ্যা।



১৯৫২ সালে, বাংলাদেশে , গভর্নর খাওয়াজা নাজিমুদ্দিনের নির্দেশে যখন উর্দুকে তদানীন্তন পুর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করা হয়, যা ছিল মুষ্টিমেয়ের ভাষা, বাংলাদেশে এক গণ-অভ্যুত্থান হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা, এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা একুশে ফেব্রুয়ারী এক বিশাল মিছিলে পথ হাঁটতে শুরু করেন ঢাকার রাস্তায়। তাদের রুখতে, সরকারের শাসন-যন্ত্র পুলিশি আক্রমণ নামিয়ে আনে, আর গুলিতে প্রাণ হারায় আব্দুস সালাম, রফিকুদ্দীন আহমেদ, সফিউর রহমান, আব্দুল বরকত ও আব্দুল জব্বর। রক্তের ধারা গড়িয়ে যায় সমগ্র পূর্ব-পাকিস্তানে—আর জেগে ওঠে বাংলাদেশ। সমস্ত দেশবাসীর সামনে মাথা ঝোঁকাতে বাধ্য হয় সরকারি প্রশাসন—বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার সম্মান দিয়ে।



এই গণজাগরণেই লোকানো ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীজ। স্বাধীনতা সহজে আসে নি। বিরোধিতা ছিল অনেক দিক দিয়েই, আর তার সাথে যোগ দিয়েছিল কিছু ঘৃণ্য মানুষ ও রাজনৈতিক দল। কিছু মানুষ শুধু এই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেই দাঁড়ায় নি, অবাধে লুঠ-তরাজ, অত্যাচার, ধর্ষণ, গুপ্তচর বৃত্তি...ঘরে ঘরে আতঙ্কের দিন ছড়িয়ে দিয়েছিল। তবু, আটকানো যায় নি স্বাধীনতা, অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছেকে পায়ের তলায় চেপে রাখা যায় নি। কিন্তু বাংলাদেশ ভোলেনি, সেই সব বিশ্বাসঘাতক নরপশুদের। আজ রাজাকার হিসেবে তাদের চিহ্নিত করে বিচার চাইছে, সঠিক বিচার। উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ, যেমন হয়েছিল ১৯৫২তে, হয়েছিল ১৯৭১ এ, তেমনি হয়েছে ২০১৩ তে।



আর এই সন্ধিক্ষণে আমরা বের করতে চলেছি সৌকর্যের পঞ্চম সংখ্যা। আমরা সকলেই প্রতিমুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি, প্রতিটি বাংলাদেশী ভাইবোনের পাশে, প্রত্যেকেই মনে মনে পৌঁছে গেছি শাহবাগের শহীদ চত্বরে, রাজীব হায়দরের মৃত্যুর সাথে সাথে গর্জে উঠেছি আমরাও। ভৌগোলিক সীমা দিয়ে বাংলা কে, বাঙ্গালীকে আলাদা করা যায় না, যেমন আলাদা করা যায় না মৌসুমি বায়ুকে, আকাশের নীল কে, সমুদ্রের জল কে...


আমরা এবার যেমন রেখেছি শাহবাগের উপর প্রতিবেদন, রেখেছি তপব্রত মুখার্জীর পাঁচটি কবিতা, রেখেছি এদেশী ও প্রবাসী বাঙ্গালীর লেখা গল্প, তেমন রেখেছি দুপার বাংলার কবিতা—আশা করি যা আপনাদের তৃপ্তি দেবে।


আপনাদের হাতে হাত রেখে আরো অনেক রাস্তা আমরা পেরিয়ে যাবো, এই বিশ্বাস গভীর থেকে গভীর করে তোলা আপনাদের যেমন দায়িত্ব, তেমনি দায়িত্ব আমাদেরও।


আসুন, একসাথে জীবনের পাতা ওল্টাই ...



নমস্কারান্তে,

সম্পাদক, সৌকর্য

প্রতিবেদন - এক দেশ,এক কারণ, এক দাবী

একটি প্রতিবেদন
শাহবাগ প্রতিবাদ: এক দেশ,এক কারণ,এক দাবী


শিরীন সুলতানা

আশুলিয়া,ঢাকা


প্রজন্ম চত্বর। কিছুদিন আগেও যাকে সবাই চিনতো শাহবাগ মোড় নামে। শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যে মশাল জ্বালিয়ে গেছেন, শক্ত করে তা আজ ধরে আছে তরুণ প্রজন্ম। কিভাবে?

এখন থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্তির জন্য যখন সংগ্রাম করছিল এদেশের আপামর জনতা তখন এদেশেরই কিছু মানুষ সরাসরি সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল, কিছু মানুষ সংগ্রাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। সংখ্যায় তারা খুব বেশি একটা ছিল না । একটা সময় সেই সব মুক্তিকামী জনতার সংগ্রাম সফল হল, আমরা... ...পেলাম স্বাধীন বাংলাদেশ । আর সেই সময় যারা মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করেছিল বা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল, তাদেরকে আমরা রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেছি । অনেক আগেই এসব দেশাদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া উচিত ছিল কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তা করতে পারিনি ।
কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠী নয়,এদেশের আপামর জনগণের চার যুগের দাবী- এই সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হোক। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল,তারা জনগণের দীর্ঘদিনের এই দাবী পূরণ করবেন। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রথম রায় ঘোষিত হয় ২১জানুয়ারী। ঐ মামলায় পলাতক আবুল কালাম ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা,ধর্ষণ,লুট,অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয় ট্রাইবুনাল। রায় ঘোষণার পরেই সারাদেশের মানুষ সেদিন আনন্দে মিছিল করে। কিন্তু ঠিক একই অপরাধে দন্ডিত,কারাগারে বন্দী কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লাকে যখন ৪ফেব্রুয়ারী যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে ট্রাইবুনাল;সারাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফেসবুকে ওঠে ঝড়, 'ব্লগার এণ্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক' নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ঐদিনই এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে শাহবাগে সকলকে অনলাইনেই আন্দোলনের ডাক দেয়। তাদের এই আহবান অভুতপূর্ব সাড়া ফেলে দেয় পুরো দেশজুড়ে। এর পরের কাহিনী কেবলই ইতিহাস।
আজ টানা ১৪দিন বিরামহীনভাবে চলছে এই আন্দোলন,স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। এই আন্দোলন শুধু শাহবাগেই আটকে থাকেনি,দেশের আনাচে-কানাচে তৈরি হতে থাকে টুকরো টুকরো শাহবাগ। এমনকি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীরা শাহবাগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সেখান থেকেই নানা প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করতে থাকেন। ১৩'র এই শাহবাগ আন্দোলনকে সবাই তুলনা করছে ৭১'এর স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে। এই তুলনা মোটেও অযৌক্তিক নয়। ইতিহাসের পুনরাবৃতির ন্যায় এই আন্দোলনও শুরু হয়েছিল একটা পরিচয়কেই সামনে রেখে ...... বাঙ্গালী। বলা হয়েছিল,যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান,রাজাকারের ফাঁসি চান-তারা এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করুন। দেশে-দেশের বাইরে কোটিপ্রাণ বাঙ্গালী আজ আমরা একসাথে হয়েছি মননে- চেতনায় সেই একটাই দাবী নিয়ে-রাজাকারের ফাঁসি চাই। ১২ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪.০০থেকে ৪.০৩ পর্যন্ত সমগ্র দেশের মানুষ,দেশের বাইরে যেখানে যত বাঙালী আছেন-একযোগে তিনমিনিটের জন্য নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করে। ১৪ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৭.০০টায় সমগ্র দেশে,দেশের বাইরের প্রবাসী বাঙালীরা একযোগে একটি করে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন এই সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক হিসেবে।
আমাদের আন্দোলনের ফসল ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে। গতকালই আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধনের বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। এই আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী,জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা। কারণ জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো, অন্যরা নয়। তাই এই দাবীকে ভিন্নভাবে দেখার অবকাশ নেই। আন্দোলনকে বানচাল করে দেওয়ার জন্য,ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু একাত্তরের রাজাকারগুলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পথের বাধা হতে পারেনি, এখনকার রাজাকারগুলোও পারবে না । লাখো জনতার ফুত্‍কারে নিমিষেই তারা বিলীন হয়ে যাবে । ইতিমধ্যে আমাদের একজন ব্লগার রাজীব হায়দার(থাবা বাবা) নিহত হয়েছেন বিরোধী শক্তির হাতে। কিন্তু বিভেদ আর অনৈক্যের সময় এখন নয়। আমরা যে পথে এসেছি, ফিরে যাবার উপায় আর নেই। সংগ্রাম চলছে, চলবে।
বাঙ্গালীর ইতিহাস পরাজয়ের নয়,বিজয়ের। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই,অপেক্ষা এখন কেবল আরেকটি ১৬ডিসেম্বরের। জয় বাংলা।



এ সংখ্যার কবি - তপব্রত মুখার্জি

এই সংখ্যার কবি
তপব্রত মুখার্জির পাঁচটি কবিতা


- ১ -

সমস্ত রাত, সমস্ত দিন চুপ করে থাকার পর মেয়েটা জল ছাপিয়ে বলে উঠেছিলঃ "চলে যায় কেন"?


কোন উত্তর ছিল না। সোয়েটারের হাতায় জল মুছে নিলেও দাগটা থেকেই যায়।

মেয়েটার বাড়ির জানলা দিয়ে খোলা রাস্তা... আর একটু পর চেনা মানুষ টাকে কাঁধে করে নিয়ে যাবে সকলে।


ভোরবেলাকার কোন কোন বিছানায় শুধু এলোমেলো চাদরের ভাঁজগুলো রয়েই যায়... সোজা করে নিতে ইচ্ছে করে না। দুএকটুকরো রুমাল এদিক-ওদিক ছড়িয়েই থাকে সেসব দিন।


জলের গায়ে বিকেল রঙের মেঘ। ফেরার গায়ে হারিয়ে যাবার ঠিকানারা। মেয়েটার জানলা পেরিয়ে অধোমুখ দিন, বিকেল-পাতা কুড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে চুপচাপ।


মেয়েটার প্রশ্ন পেরিয়ে আরও একটা সন্ধ্যে, আরও একটা রাত নামবে; একটা শীত-রঙের অন্ধকার থেমে থাকবে পর্দার ওপারটায়... যাওয়ার মোড়ে অচেনা উত্তরের ভিড়-- জমতে জমতে পাথর হয়ে ওঠার শব্দ শুধু...।।


- ২ -


বেঁচে থাকবার জন্য একটা খোলা ছাদ দরকার। এটা লিখতে লিখতেই মনে পড়ছে, কতদিন উপরতলার ছাদটায় গিয়ে দাঁড়াইনি।

চাবিটাও যেন কোথায় হারিয়ে ফেলেছি...


- ৩ -


কিছু কিছু শব্দমেঘ শুধুই বদলাতে চায়... আর শেষবেলায় পড়ে থাকে দু-একটুকরো ইচ্ছে। আমাদের মনখারাপের রঙ নেই; অনেকটা সন্ধ্যেবেলার মতো। অন্ধকার নেমে এলে আলো জ্বলবে। আমাদের বাড়িগুলো একএকটা বাঁকের মুখে...


সমস্ত বাঁকের একেকটা নাম ছিল এককালে... দরজা পেরিয়ে এলে ভুলে যাওয়াটাও কতটা সহজ হয়ে আসে, না?


- ৪ -


যাওয়াটাই দেখেছ শুধু?

বাকি যে পথ বেয়ে ফিরে গেছে আমাদের নাম,
ক্লান্তিহীন অভিলাষ ছুঁয়ে বয়ে গেছে শ্বাস, ঘুম-জ্বর, স্বপ্নমেঘ যত :
কিছুই দেখনি কি?

আমাদের থেমে থাকা ছিল, একসাথে ফেরার শব্দেরা,প্রবহমান...


দিন চলে গেলে পথ পড়ে নেয় কিছু আলোক-বিষাদ--

একা একা পার হয়ে যাওয়া হাত বহুদিন আবছায়া খুঁজে গেছে চরাচর
যে পারের ঠিকানায় শিশিরের ডাক..
কিছুই শোননি তুমি?

যাওয়াটাই দেখেছ শুধু?... ফেরা-টা


কখনোই দেখো নি?


- ৫ -

বেঁচে থাকতে কখনও একটা ভগ্নাংশই যথেষ্ট...
এবং অভ্যস্ত শ্বাস...

আমাদের বাকিটুকু শিশির বা অপেক্ষারীতি, গলিত জ্যোৎস্না ও তারকারা

পড়ে নেবে স্বাভাবিক...

তারপর দু-আঁজলা মাটি রেখে যেও,

তারপর, তুমি শুধু ফুল রেখে যেও, দেশ...।।

ছোটগল্প - উদয়ন রায়

শুধু যখন বৃষ্টি হবে
উদয়ন রায়


এটা শুধুই একটা পুকুরের গল্প। বা তাও নয়। এটা একটা মেয়ের গল্প, তার একলা জানালার চৌখুপির গল্প। বা তাও নয়। এটা একটা জীবনের গল্প, একদিনের-প্রতিদিনের। না তাও ঠিক হল না। কিছু অকিঞ্চিৎকর মানুষের গল্প, হয়তো।

কলকাতার কাছাকাছি, আগাছায় ভরা রেললাইন, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম, মরচেধরা লেবেল ক্রশিং, লেবেল ক্রশিং-এর ধারের চা-দোকানের ঝুপরি, বন্ধহওয়া কাঁচ'কলের জংধরা গেট, খোলা নর্দমার ডাঁশ মশার পন্‌পন, ঘাসওঠা কাদাজল মাখা উঠোন-আক্‌তি খোলা জায়গা, যার নাম 'নেতাজী ময়দান', সেখানে ডিসেম্বরের ধোঁয়াশা ভরা সন্ধ্যায় ম্যারাপ খাটিয়ে, নিয়নের আলোয় হয় অষ্টপ্রহর হরিনাম সংকীর্তন, এখানেই হয়তো তাদের দিনগত আহার-নিদ্রা-সঙ্গম। বোজা পুকুরে, ঘেঁষ আর শুরকি ফেলা জমিতে, বা পুকুরের ধার ঘেঁষে উঁচু জমিতে তাদের কোঠা বাড়ি, টালিরচালের বাড়ি দখলের জমিতে, অথবা পয়সাওয়ালা বড় চাকুরে বা ব্যবসাদার-এর সাদা-হলুদ-লাল রং এর বেমানান অট্টালিকা।



পুকুরটা সেই জীবনের সাক্ষি গোপাল। পুকুরটা বড়। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে প্রায় দেড়খানা ফুটবল মাঠের সমান। পুকুরটা আর তার আশেপাশের পাড়ার নাম সেনবাগান। কে জানে কেন এরকম নাম, কবেই বা হয়েছিলো এরকম ? পুকুরটার পূবদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া কাঁচ'কলের দেওয়াল। দেওয়ালে গায়ে নোনাধরা ইঁট আর বটগাছের চারা। উত্তরদিকে পুকুরের ধার ঘেঁষে এট্টুখানি চওড়া রাস্তা, দুনম্বর রেলগেট থেকে চলে গেছে বিটি রোড। এই রাস্তার দুধারে ড্রেন, মাশার চাষ হয় সেখানে। ড্রেনের ওপর বাঁশের পাটাতন পাতা পান-বিড়ি সিগারেট আর রেডিও-ঘড়ি-প্রেসারকুকার সারাই-এর দোকান। ঘিঞ্জি রাস্তায় মাঝে মাঝে যায়-আসে ক্যান্টনমেন্ট রুটের প্রাইভেট বাস। সরু রাস্তায় মুষকো বাসকে রাস্তা দিতে, পথচারীদের নেমে যেতে হয় প্রায় নর্দমায়। বাস চলে ২কিমি গতিতে। সেটা যত বেশী না ভীড় বাঁচাতে, তার চেয়ে-ও বেশী প্যাসেঞ্জারের আশায়। পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম পাড় এখানে-ওখানে সিমেন্ট করা। ভাঙ্গাচোরা সিঁড়ি নেমে গেছে জলে। পুকুরের ধার দিয়ে বারোফুটিয়া রাস্তা। খোয়া ঢালা। পিচ হয় নিয়ম করে, তবে ছয়মাসের বেশী অবশিষ্ট থাকেনা। রিক্সা চলে সেখানে, আর দুটো টিউওয়েল। রাস্তার ধারে ধারে নতুন পুরোনো পাকাবাড়ী। একতলা বা দোতলা বা তিনতলা। রাস্তার দিকে সস্তা গ্রিলের গেট।



পুকুরের দক্ষিন পারে তিনতলা বাড়ীর দোতালায় ভাড়া থাকে সুমনা আর তার বর। সুমনা-র বিয়ে হয়েছে ভালবেসে। বরটা তার সওদাগরি কোম্পানীর কারখানায় সামান্য উঁচুদরের চাকুরে। সূক্ষ্মদরে বিচার করলে অবশ্য কেরানীর বেশী কিছু নয়। তার ভাবখানা যেন কেউকেটা মতন। তার আপিসের ভাগ্য যেন লেখা আছে তার-ই হাতের মুঠোয়। তাই সেই 'একশো বারো' টাকা মাইনেতে দিবারাত্র আপিসের গোলামি খেটে যায় সে। পুর্বরাগ পর্বে ইডেনে বা বালিগঞ্জলেকের ঘন অন্ধকার মাখা বেঞ্চে বসে, পুলিশের চোখ এড়িয়ে সুমনার নরম-ভেজাভেজা ঠোঁটে চুমু দিতে দিতে সে বলেছিলো অফুরান সময় একসাথে কাটানোর কথা। সেকথা সে ভুলে গেছে কবেই । বা ভোলে-ও নি হয়তো। অপিসের গোলামি আর সুমনার জন্য সময় কাটাকুটি হয়ে যাচ্ছে বারবার। সুমনা বসে থাকে জানালায়। পুকুরের ধারে একটা কদমগাছ রাস্তা পেড়িয়ে ঝুঁকে এসেছে জানলার গ্রিলে। জানালার নীচে পুকুরের ধারে টিউওয়েল। লুঙ্গি আর ময়লা সার্ট পরা 'ভারী' টিনের বাঁকে করে জল নেয় টিউওয়েল থেকে। পুকুরের জলে বাসনধোয় ঠিকে কাজের লোকেরা। গুমোট দুপুরে কাপড় কাচে ঘাটের ভাঙা সিমেন্টের চাঙড়ে। বর্ষায় পুকুর প্রায় উপচে ওঠে জল। ঘাটের সিঁড়ি চলে যায় জলের তলায়। জলের ধারে মুখ বাড়িয়ে থাকে হেলে সাপ। বাসনধোয়া এঁটোকাঁটার আশায়। পাশের বাড়ীর প্রৌঢ় নন্দীবাবু-র ছেড়ে রাখা লুঙ্গি-তে লুকিয়ে থাকে হেলে সাপ, নন্দীবাবু তখন বুকজলে দাঁড়িয়ে নিমের দাঁতন করছিলেন। তারপর নন্দীবাবুর ভ্যাবাচ্যাকা মুখ আর লুঙ্গি ঝাড়ার বিচিত্র কায়দায়, হেসেকুটোপাটি হয় সুমনা, জানালা থেকে। রান্নাঘরে বাসনের ঠুংঠাং ,কাজের মাসিএল বোধহয়, একা কোথায় আর ? গরমের গুমোট দুপুরে, রেললাইনের ধারের বস্তির ছেলেপিলেরা ঝুপুস ডুবে থাকে জলে। জলের ধারের অশ্বত্থ গাছের ডাল থেকে ঝপাং লাফায় জলছিটিয়ে। কালোকুলো রোগারোগা, নেংটি পরা ছেলেদের হিহিহাসি আর মুখখিস্তির ফুর্তি শুনতে শুনতে সুমনার একা একা লাগেনা আর। বিকেলের দিকে, আকাশ ঘন করে ঝড় আসে। ঝড়ের তোড়ে ধুলো ওড়ে, ব্‌ষ্টি আসে ঝাঁপিয়ে, ধুলো আর ব্‌ষ্টিতে ঝাপসা হয়ে যায় পুকুরের পাড়। ব্‌ষ্টি থামলে সন্ধ্যা নামে ঝিঁঝি-ঁর ডাকে। ভেজাভেজা বাল্ব জ্বলে কাঁচ'কলের গায়। সুমনার কান খাড়া শোনে রিক্সার ক্যাঁচকোঁচ। বর আসবে এখুনি । অপেক্ষায় অপেক্ষায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। হ্যাঁ বর আসে, নিশুতি রাতে, পাড়া যখন ঘুমিয়ে পড়েছে। কাজের শেষে, অপিশ উদ্ধার করে। তারপর, রাতের খওয়ার শেষে, বিছানায় আবেশে, শরীরে শরীরে ঘনিষ্ঠ হতে হতে, সুমনা ভাবে, রবিবারের আর কত দেরি ?



কাজলদা। নন্দীবাড়িতে আশ্রিত। রোগাসোগা মধ্যবয়সী বেকার। বি এ পাশদিয়ে মাড়োয়ারি গদিতে খাতা লেখা থেকে বে-আইনি ওষুধের সেলসম্যানগিরি সব কাজেই অভিজ্ঞ। তবে আসলে অলস প্রক্‌তির। উপস্থিত কিছুই করেন না। একার জীবন চালাতেই হিম্‌সিম। প্রৌঢ় নন্দীবাবু, সম্পর্কে ওর গ্রামতুতো মামা হন। উঠোনে ইঁটের গাথনি আর দর্মার ছাদ দিয়ে ঘর বানিয়ে কাজলদা-কে থাকতে দিয়েছেন। এর বেশী কিছু নয়। ভাত জোটে মাঝেমধ্যে। কিন্তু কাজলদার শুধু ভাতে চলেনা, সিগারেটের নেশা, তরলের-ও। বিলিতি-র পয়সা নেই তাই চোলাই। মেয়েমানুষের ইচ্ছা-ও আছে, পয়সা নেই। তাই এর-ওর মাথায় হাত বোলানো। মানে জকমারা। বন্ধুর-বন্ধুর-বন্ধুর সোদপুরের বাড়িতে, ইলেকট্রিসিটি বিল জমা দেওয়ার নামে, টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া। আরো কোনো এক অল্প পরিচিতের ছাদের পাখা সারাই করার নামে, লোহার দরে বেচে দিয়ে আসা। এরকম করেই চলে কাজলদার আজ-কাল-পরশু। বি এ পাশের গুমো্র আছে অবশ্য বারোয়ানা। চোলাইয়ের ঠেকে রিক্সাচালক হরি-মধু আর রংএর মিস্ত্রি গুলে দের মনুষ্য প্রজাতির মনে করেন না । নীলগলাবন্ধনির খাটিয়ে কাজের লোকেদের ঘামের গন্ধে সরগরম চোলাইয়ের ঠেকে বিমর্ষ বসে থাকেন কাজলদা। ভাবেন শ্রেনী বৈষম্য। অনেক রাতে, বেসামাল পায়ে বসেন পুকুরের ধারের সিঁড়িতে। ঘোলা হয়ে ওঠা মগজের ঠেলায় হেঁড়ে গলায় গান ধরেন, 'কেন যামিনী না যেতে, জাগালে না'। সুমনা রাত জাগা চোখে শোনে। সুমনা জানে কাজলদার দর্মার ছাদের ঘরে, একটা পুরোনো এস্রাজ আছে। নন্দীবাড়ীর বউ তাকে বলেছে। কালেভদ্রে সেটা বাজান কাজলদা। বাজনার হাতটা তার মিষ্টি।



স্বপন ডাক্তার। বছর পঁয়তাল্লিশের, এম বি বি এস। পাড়ার ডাক্তার। বাবু নন, শুধু-ই ডাক্তার, সর্দি-কাশি-পাতলাপায়খানা-অম্বলের। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে তাঁর পৈত্‌ক বাড়ি-কাম-ডিস্পেনসারি। ই এস আই প্রেস্কিপশন লেখা তাঁর প্রধান কাজ। ছুটির দরখাস্ত আর ফিট সার্টিফিকেটে দস্তখত করা তাঁর অন্য প্রধান কাজ। বেওয়ারিস সারমেয়-এর দৌলতে, জলাতঙ্কের ওষুধের ব্যবসা-ও করছেন আজকাল। সকালের ডিস্পেনসারি শেষ করে, গামছা পড়ে, তেলের শিশি আর লাইফবয় সাবানের কৌটো হাতে পুকুরে যান স্নানে। পাতলা হয়ে যাওয়া কোঁকড়া চুলে, ঘষে ঘষে মাখেন প্যারাসুট নারকেল তেল। নাতিদীর্ঘ শরীরে আর ভুঁড়িতে লাইফ বয় সাবান। তিন চারটে ডুব দিয়ে বাড়ী ফিরে পোনামাছের ঝোল। সন্ধ্যায় আবার সেই তেঁতুলকাঠের ডিস্পেন্সারির টেবিল। রাতে যৌবন উত্তীর্ন বউ-এর সঙ্গে ভাগাভাগি বিছানা। রাত-বিরেতে মাঝেসাঝে কল আসে এবাড়ি সেবাড়ি থেকে। বর্ষায় ম্যালেরিয়া আর টাইফয়েড বাড়লে। সেদিন সুমনার সারাদিন-ই মাথা ঝিম্‌ঝিম। ওর বর ফেরে সেই নিশুতি রাতে। সুমনা তখন শরীরের অসোয়াস্তিতে বিছানায়। ব্যস্তসমস্ত ওর বর ডেকে আনে স্বপন ডাক্তারকে। সুমনার চোখের তলা আর নাড়ী দেখে, দুচারটে পরীক্ষার কথা বলে ফিরে যান ডাক্তার। বাড়ী ঢোকার আগে পুকুরের সিঁড়িতে ঝুম বসে থাকেন কিছুক্ষন। সুমনা সন্তানসম্ভবা। কিছুদিন পর ওদের দোতালার গ্রিলে ঝুলবে ছোট্ট ছোট্ট ব্যবহার্য্য। তাঁর নিজের বাড়ীর গ্রিলটা কতদিন খালি আছে, খালি-ই থাকবে।



ঝর্নাদি। একটু গলিতে ঢুকে, তিনইঞ্চি ইঁটের গাথনির দুঘরের বাড়ী ঝর্নাদির। বাড়ীটা হয়েছে দুবছর। ইঁটের দেওয়ালে পলেস্তারা নেই। মেঝেতে ইঁট পাতা। নীচু জমি বলে, বর্ষায় জল হয় বাড়ীর চারপাশে। তখন রাস্তা থেকে বাঁশের সাঁকোতে ঢুকতে হয় বাড়ীতে। জানালা বসানো হয়নি এখোনো। শীতে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় উত্তরের হাওয়া। ঘরের ভেতরে ইঁটদিয়ে উঁচুকরা পুরোনো খাট, খাটটা, ঝর্নাদির ভেঙ্গে যাওয়া বিয়ের উত্তরাধিকার। রংওঠা স্টীলের আলমারি, এটাও সেই বিয়ের, যৌতুকি। কাঠের কুলুঙ্গিতে, শনি-অন্নপুর্না-লক্ষী-কালী-র ফটো। শেষহয়ে যাওয়া দেশলাই-এর বাক্সে গোঁজা পুড়েযাওয়া ধুপকাঠি, ছাই, শুকনো জবা ফুলের মালা দুচারটে। ঘরের ভেতর আড়াআড়ি টানানো, নাইলনের দড়িতে, গাম্‌ছা, শাড়ি, ব্লাউজ, সায়া, ছেলেমেয়ের স্কুলের জামা-প্যান্ট-স্কার্ট-ইজের, অনেকবার কাচায় রংওঠা। মাটিতে একটা জলচৌকিতে ছেঁড়াছেঁড়া মলাটের বই খাতা। জলে ভেজা পেনের কালিতে গোটা গোটা করে লেখা 'শুভদীপ রায়-চতুর্থ শ্রেনী-ক' বা 'শর্মিষ্ঠা রায়-পঞ্চম শ্রেনী-ক'। ঝর্নাদি একা। একটা-একটা ছেলে মেয়ে। তারা দশ-এগারো বছর। স্কুলে যায়। ঝর্নাদি পেডলার। পন্য তার, রান্নার গ্যাসের ওভেন পরিস্কার করার আজব সল্যিউশন। মিউরিয়াটিক অ্যাসিড আর অন্যান্য ক্ষারজাতীয় কেমিক্যাল্‌স মিশিয়ে তৈরী হয়। প্লাস্টিকের বোতলে ভরা হয়, লেবেল-ও লাগান হয় আজগুবি। তারপর, ঝর্নাদির মতো পেডলারদের ব্যাগে ভরে পাঠানো হয় গ্রামেগঞ্জে বিক্রির জন্য। আর গ্যাস ওভেনের পাইপ আর নামী গ্যাস কোম্পানীর নকল বার্নার। ঝর্নাদিদের কাছে থাকে নামী গ্যাস কোম্পানীর ভুয়ো পরিচয়পত্র। হাড়ভাঙ্গা খাটুনি সারাদিন। ভারীব্যাগ কাঁধে নিয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটা গ্রামের পথে। অনর্গল কথায় মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। সারাদিনের কাজের শেষে কমিশন মেলে বিক্রিবাটার। ছেলেমেয়েদের স্কুলের খরচ জুটেযায় এইভাবে। প্রতিদিন সন্ধ্যারাতে, সারাদিনের খাটুনির শেষে, বাড়ী ফিরে পুকুরে গা ধুতে যায় ঝর্নাদি। সুমনা দেখে জানালা থেকে। ঝর্নাদি-কে দেখে ইর্ষা হয় তার। এবারে তাকে চাকরি খুঁজতে হবে। বাড়ীর কাছেই 'অরবিন্দ বিদ্যাপীঠ'। বিটি পাশ-তো করা-ই আছে।



ছোটগল্প - পূজা মৈত্র

অন্তর-জাল
পূজা মৈত্র

আজ সকাল থেকেই মনে মনে একটু উত্তেজনা বোধ করছিলো অনুশা।রণদীপের সাথে আজ বিকালে ডেট আছে।সাউথ সিটি মলে,বিকাল চারটেয়। মাস তিনেকের ফেসবুক বন্ধুত্ব রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপশন, ক্যাজুয়াল হাই, হ্যালো, লাইক, কমেন্ট, চ্যাটের ধাপ পেরিয়ে এখন ভালোলাগায় এসে ঠেকেছে। রণদীপ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বড় এম.এন.সি তে আছে, সেক্টর ফাইভে চাকরি করে। অনুশা ক্লাস টুয়েলভ,সায়েন্স।ইঞ্জিনিয়ার ছেলের উপর ওর ঝোঁক বেশি, কারণ এরা সহজে বিদেশে যায় আর মাইনেটাও মন্দ পায়না। রণদীপের প্রোফাইলের এই স্ট্যাটাসটাই অনুশাকে যেচে কথা বলতে বাধ্য করেছিলো।তার উপর দেখতেও খারাপ নয়। টল,ফেয়ার, হ্যান্ডসাম।বাসে করে সাউথ সিটি মলের দিকে যেতে যেতে অনুশা ভাবছিল, রণদীপের প্রপোজালটা আজকেই অ্যাকসেপট করে নেবে।ইনবক্সে পরশুদিনই ফর্মালই প্রপোজ করেছে রণদীপ।অনুশাই দেখা করতে চেয়েছে। হ্যাঁ তো বলবেই, একটু দাম বাড়ানো আর কি! বাড়ি ফিরেই রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসটা চেঞ্জ করতে হবে।‘ইন আ রিলেশন উইথ রণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়’!!! সৃজা, প্রতীক্ষা, সুকন্যাদের চোখ টেরিয়ে যাবে।


চলমান সিঁড়ি দিয়ে থার্ড ফ্লোরে উঠল অনুশা। ফুড কোর্টে থাকবে বলেছে রণ দীপ। সবুজ চেক শার্ট, ডেনিম জিনস...ঐ তো! অনুশার দিকে পিছন করে বসে আছে। চুলটা ঠিক করলো অনুশা। কেমন দেখাচ্ছে ওকে কে জানে? রণদীপের ভাললাগবে তো ? এমনিতে অনুশা বেশ সুন্দরী। ছিপছিপে চেহারা, লম্বাটে গড়ন, একমাথা কোঁকড়ানো চুল। সবথেকে সুন্দর ওর চোখ দুটো। মায়ায় ভরা। পাখির নীড়ের মতো উপমাটা ওর চোখ দেখেই কবি লিখেছিলেন বোধহয়। গায়ের রং একটু চাপা, তবে আজকাল এই রঙটাই ইন।অনুশা নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন।চাপা গর্বও আছে, এই জন্য। আজ অনুশা কুর্তি পরবে ভেবেছিলো, রণদীপের কথাতেই টিশার্ট পরেছে।ওয়েস্টার্ন ড্রেস রণদীপ লাইক করে।


_ “ হাই----- ” অনুশা কাছে গিয়ে বলল। ছেলেটা ঘুরে তাকাতেই প্রচণ্ড ভাবে চমকে উঠল অনুশা। মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে এল


_ “ তুই!!”


রূপক হাসল – “ আমি। আর কে হবে? ”


রূপক ওদের ক্লাসমেট। পড়াশুনায় পিছনের দিকে। আর্টস নিয়ে পড়ে। অসংখ্যবার অনুশাকে প্রপোজ করেছে।অনুশা- ও অসংখ্যবার ভদ্র,অভদ্র দুইভাবেই রিফিউজ করেছে। রূপক খুব হ্যান্ডসাম। ক্লাসের মেয়েরা বলে ও অনুশাকে সত্যি ভালোবাসে। বাসুক---- আর্টস? ইয়াক! হোপলেস।


_ “ তুই এখানে কি করছিস? ” অনুশা রেগে আগুন!


_ “ তোর জন্য ওয়েট করছি। ” ব্যাঙ্গের হাসি হাসল রূপক।


_ “ আমি তোর সাথে দেখা করতে আসিনি। ”


_ “ জানি, রণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করতে এসেছিস। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সেক্টর ফাইভে আছে। মিস রায়চৌধুরী ওটা রূপক চক্রবর্তীর ফেক প্রোফাইল। ঐ নামে কেউ নেই। ”


_ “ মানে? ইয়ার্কি করছিস নাকি? ”


রূপক উঠে দাঁড়াল- “ না তো। এই দ্যাখ না, আমি-ই তোর সাথে দিনের পর দিন চ্যাট করেছি অন্য নামে। অথচ তুই বুঝিসই নি। এই তুই সায়েন্স পড়িস? এই তোর ইন্টেলিজেন্স !! ”


অনুশার চোখে জল চলে এসেছিল। শয়তান ছেলেটা এভাবে ঠকাল ওকে? আর ও নিজে এত বড় গাধা!


-“ অনুশা, ভালোবাসায় সায়েন্স, আর্টস, ইঞ্জিনিয়ার, বেকার---- ট্যাগগুলো ম্যাটার করে না। মনটা ম্যাটার করে। রণদীপ হয়ে এই অধমই কিন্তু তোর মনটাকে ছুঁয়ে গেছে, একটু হলেও। পাবলিক প্লেস----কাঁদিস না---বস---কফি বলি?”


অনুশার বিস্ময় সীমা ছাড়াল। ছেলেটা কি? ওকে এত বড় অপমান করে হেসে কফি খেতে বলছে! চড় মারতে ইচ্ছা করছে এখন ওর----অথচ---


কফি শেষ করে বাড়ি ফিরল অনুশা। কেমিস্ট্রি টিউশনটা কামাই করেছে। মাকে বলেছে শরীর ভালো নেই। নিজের ঘরে শুয়ে অভ্যাসবশতই ফেসবুকটা খুলল। এ কি! রণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো ওর ফ্রেন্ড লিস্টেই আর নেই। তার জায়গায় একটা নতুন নাম জুড়েছে। রূপক চক্রবর্তী। ইনবক্সে মেসেজ ও এসেছে একটা, “ বাড়ি ফিরলে জানাস। ”


ব্লক করবে ভাবল অনুশা। হাতটা আটকে গেল। রিপ্লাই বাটনে ক্লিক হয়ে গিয়ে উত্তর পৌঁছে গেল না চাওয়া গন্তব্যে, “ ফিরেছি।তুই? ”


কবিতা - কচি রেজা

হেমন্তের ধূলো
কচি রেজা


কোনো হেমন্ত কেন যেন শেষ হয় না
আর আমার হাঁটাও
শহরে এসেছে যে সব ঝুটিওয়ালা মোরগ
যে-সব ভিখিরির থালা কিঞ্চিত খুচরা নিয়ে
কী দ্রূত তারা পার হয় হেমন্ত
ক্র্যাচও কেমন নির্বিঘ্ন!
আমার সালোয়ার-ওড়না, আমার শীতের চাদরে শুধু উল
চশমায় ধুলোররাজ্যি, কাঁধের ব্যাগভর্তি শুধু পারি না, পারি না
জল ডাকলে, নীল ডাকলে সাদা হতে থাকে হাত
আমাকে কী হেমন্ত শাসায়!

চাঁদ চুমু খাক মুখে, আমিও চাঁদের
আহ্নিক পাল্টালো তুমুল ব্লিজার্ড, মরুঝড়ে কতো যে হারালো
তবু বার্ষিক জোয়ার নিয়মমতন

হেমন্ত ভেজালো

কবিতা - দেবরাজ ভট্টাচার্য

কবিতাপ্রলাপ
দেবরাজ ভট্টাচার্য


মৃত কুঞ্জে ভেসে যায় আহ্লাদের স্বর
যে যার কবিতালেখ্যে একা স্বয়ম্বর
রাত্রিকে সমান বেশি বহ্নি দিতে পারি
তার পাশে পা ছড়ায় কোন ছুঁড়ি চল...

মৃত কুঞ্জে ভাসে এক আহ্লাদের স্বর
এটুকুই অবসর গোপন জীবনের
আমি দেখেছি কবিতা মানে অন্যদায়
লক্ষ্যহীন সীমানার সীমানাকে টানে

বাকিসব অম্লজল বিস্বাদের বোঝা
ফিরে যাও একা রোখ কবিতার ঘাড়ে
এরপর এ চোখের দায় নেই কোনও
এরপর এ দেহের দোষ নেই কোনও...

পাখিদের দেখা থেকে দৃশ্যটি দৃশ্যত দেখে--
একা জ্বর আলিঙ্গন নাড়াচাড়া করে।

কবিতা - কিরীটী সেনগুপ্ত

দুটি কবিতা
কিরীটী সেনগুপ্ত

(১)
পোড়া বেলা…

পোড়া বেলা সমুদ্রে ভেসে
অজানা নাবিক নিয়ে এলো
চেনা গন্ধ মৌচাক;
তীব্র আরও তীব্র হতেই
নোনা খাঁচায় পুরে
ভেসে গেল নতুন দেশে।

নিরীহ খাঁচায় নোনা
গন্ধ শুধু;
সুগন্ধি ঈশ্বরী চোখ বুজে
মেপে নিচ্ছেন নাম-গান।


(২)
পুরুষ-কাল
কানে বাবা এলে
ঔরসে মায়া হয়,
শুনছো শুনে শরীরী
মুহূর্তের অংশীদার কথা ব’লে,
বাবু ডাক আর
অবুঝ আমি জাগি,
ঘাট-কাজ শেষে
আমার উত্তরাধিকারী-ভাঁজ;
ছেঁড়া পৌরুষ এবং
পুরুষ আমি।

কবিতা - আজম মাহমুদ

পার্থক্য খুঁজে পাইনি
আজম মাহমুদ


ভেবে দেখেছো
তোমার জন্য এবার আমার জেল হয়ে গেলো
পাঁচ বছর। 

মনে আছে
সেই তিরাশি হাজার বছর আগে তোমার
জন্য আমার মস্তক দিতে হয়েছিলো রাজার
পায়ে বিসর্জন। 

আমি এভাবেই ভেঙ্গেছি জন্মে-জন্মে
তোমার জন্য এবং তোমাদের জন্য
আমাকে শুধুই বারবার ভেঙ্গে যেতে হয়। 

কোন্ জন্মে আমার জন্য অবধারিত সুখ আছে?
কোন্ জন্মে আমাকে সুখী করার প্রতিজ্ঞা
থাকবে তোমার বলতে পারো?

এমন একটা মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা
সব উপাসনালয় খুঁজেছি যেখানে
সঠিক ধর্মযাজক পাবো- যারা পূণ্যগুলোকে
পাপে রূপান্তরিত করবে না,
এমন একটা সমাজ পাবো যারা পবিত্র এই
ভালোবাসায় অপরাধ গুনবে না।

তিরাশি হাজার আগের পৃথিবী
আমার আজকের পৃথিবী- আমার প্রেম দিয়ে
বিচার করে পার্থক্য খুঁজে পাইনি মোটেও।

কবিতা - ঊষসী ভট্টাচার্য্য

পথ ই পাথেয়
ঊষসী ভট্টাচার্য্য


রাস্তা শুধু রাস্তা হাঁটে,
জীবন নাকি চলার সুর,
দিক হারালো দিন জোনাকি,
জীবন সে তো রাস্তা দূর ।

রাস্তা সে তো রাস্তা কাটে,
জীবন শুধু আগুন মুখ,
ভালো থাকার গল্প বলে,
রাতবিরেতের প্রাচীন সুখ।

রাস্তা শুধু রাস্তা মাপে,
জীবন শুধু পোড়ার নাম,
কথার পিঠে কথা শুধু,
বাকি চিঠির খোলা খাম ।।

কবিতা - ঋতুপর্ণা সেন

একটি কবিতা
ঋতুপর্ণা সেন


জল কাতর শরীরে যতো চড়াই-উৎড়াই,থির চোখে মুয়াজ্জিনের আজান.. হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া বেহেশতী সূরের ...নাব্য অভিমান ।তবু জল-আয়নায় আরব্যরজনীর রূপ তিলক ।জলের সিম্ফনি বান হয়ে আসে ... মোহোনায় ওষ্ঠ অধর খুশবু অবিনাশী । স্তনফুলে বিদ্যুল্লতার অদ্ভূত নার্গিসি শিহরণ।পরিণামহীন এক জলধারা— আমি ...এত বেশি দ্রবীভূত হবো ... পললে শোণিতে স্বেদে ছিলাম বে- খবর... ক্ষুদ্র স্রোতস্বিনী;কাল রাতে সাগর সঙ্গমে হারিয়েছি নোলক ....রূপশালী ধানের হরফে আদর লেখেনি মলিন বহতা জিসম -এ রত্নাকর ...উপল চপল কিছু কথা কেড়ে নিল সব ।

অনেক রাতে কোনো ভোর ডাল হয়ে ছোঁয় যদি পানি ...বলে দেব ... আমি একক নীলকন্ঠ পাখি ...আমার আসমানে ।
মুক্তি দিলেম ... এই 'শব' নারী দেহ থেকে ।চাইনা রতিসুখসার শিশ্ন সুধা ভিক্ষা হর রোজ । স্ব-মেহনে দুর্বার হও জলধি ...অথবা বহুগামী ফেরেশ্তা ...
শিলা পটে কেউ লিখে গেছে ...আমি এক আহত নদী ।
আমার জানাজায় লোনা জল একক মেহেরবা (ন)

কবিতা - শুভাশিস সামন্ত

জানতেও পারিনি
শুভাশিস সামন্ত

তোমার দেওয়া কালো শাল এ বছর গায়ে দিইনি ,
তোমার দেওয়া কাপে
চুমুক দিইনি অনেকদিন ।
ঠিক করেছি ...
এ বারের বিশ্ব কাপ ফুটবল দেখবোনা বলে ।
ভালবাসলে মেয়েরা হয়ে যায় নদী ,
পুরুষ হয় পাহাড়ের মতন ...,
তাই তো ধারন করেছিলাম বুকের গভীরে ।
হৃদয় বসত ভেঙ্গে ,
কখন যে ঝরনা হয়ে
সমুদ্রে মিশে গেলে
জানতেও পারিনি ... ।।

কবিতা - ইন্দ্রানী সরকার

ঘুম ভেঙে যাক
ইন্দ্রানী সরকার

ঘুম ভেঙে যাক আগামী দিনের
ক্লান্তির শেষ রেখাটি মিশে যাক
বিগত রাতের গভীরে |
যা কিছু সুন্দর আর সুমধুর
তা তোমাকে দিলাম |
আজ এই নবান্ন রোদের মিছিলে
ছুঁয়ে যাক বোধ আমার |
সেদিনের গান আর কবিতা
ছড়িয়ে দিয়েছে মিলনের সুর
মনের জোনাকি গহীনে |

কবিতা - দেবাশীষ রায়

মায়ের ভাষা...
দেবাশীষ রায়

অ- অজগর রাজনীতিবিদ।
আ- আমটি খোঁজে ফন্দি ফিকির।
ই- ইঁদুর ছানা এদিক ওদিক।
ঈ- ঈগল পাখির চোখ দুটো স্থির।

ক-কপাল পোড়া, বাংলা ভাষা।
খ- খুন হয়েছে। জোর হতাশা।
গ- গান ধরেছি ঘুম তাড়াতে।
ঘ- ঘুম ভাঙ্গে না, এ এক নেশা।

ঘুম ধরেছে নেশার টানে
অন্য ভাষায় সংগোপনে
বিক্রি করছি নিজের জীবন
তবু, শ্বাস নেব না অক্সিজেনে।

ফরফরিয়ে বলছি কথা
কিন্তু জানি কোথায় ব্যথা
চোখ ধাঁধানো কায়দাবাজি
আর, অনুবাদে ব্যস্ত মাথা।

নিজের ভাষা ভুলছি কেন?
কোন ধরনের এ বিশ্বায়নও?

কৌটো খুলে ধরবে নাকে?
শোঁকো , মায়ের গায়ের গন্ধ চেনো ? ? ?

কবিতা - শুভাশিস সিংহ

ভো-কাট্টা
শুভাশিস সিংহ


তান্ডব কখন থেমেছে
দাতব্য হৃদয় তথ্য সংরক্ষণ করেনি,
পাগলাটে তালগাছ, বখাটে ধানক্ষেতের
দাপটে বাতাসে বয়ে গেছে প্রলয় - চুপিচুপি।
কোনও প্রতিবাদ জানায়নি, সমর্থনও করেনি।
নীরবতা মানে সমর্থন নয়;
তবু কিছু সমর্থনে নীরবতা চাই,
প্রয়োজনের গুরুত্বও কমাও, সঙ্গ দাও
যেরকম সঙ্গ দিয়েছিলে
নদীর ধূপছায়ায়, অবসরের যাতনায়, নিষ্পাপ চোখের বিশ্বাসে।
অসহায় পাগলের মত চিৎকার কোরোনা,
তোমার অসহায়তা বহু আগেই ফুঁ'এ উড়িয়েছে কেউ।

তুমিও ওড়াও লুব্ধি মাঞ্জায় ময়ূরপঙ্খী,
সুতো ছিঁড়বেই, দাপটে বলো - ভো'কাট্টা।

অনুবাদ কবিতা - ইন্দ্রনীল তিওয়ারী



প্রেম কখনো একতরফা হয় নি

কবি - গুলজার
অনুবাদ - ইন্দ্রনীল তিওয়ারী

প্রেম কখনো একতরফা হয় নি, না হবে।

দুই আত্মার এক মিলনের যমজ জন্ম হল এই প্রেম।
প্রেম কখনো একা বাঁচে না।
বাঁচলে দুই মানুষে বাঁচে,
মরলে দু জনেই মরে।

প্রেম এক বহতা নদীর মতো,
কোন ঝিল নয় যে যাকে কিনারা বেঁধে রাখে।
কোন সাগরও নয় যে যার কোন কিনারা নেই।
ব্যাস, শুধু এক বয়ে যাওয়া নদী।

নদী যেমন ওপরে ওঠে, নেমে যায়,
চড়াই- উৎরাই ,প্রেমে এই সবকিছু থাকে।

জলের স্বভাব হল উপর থেকে নীচের দিকে যাওয়া,
নীচের থেকে ফের উপরের দিকে দ্রুত উঠে যাওয়া।
মেঘ হয়ে আকাশে ভেসে বেড়ান,
কাঁপতে থাকে,যখন জোর তুফান ওঠে।
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি হয়ে ঝরে।

প্রেম শরীরের বাদ্যযন্ত্রে বেজে ওঠা কোন সুর নয়।
না কোন মন্দিরের আরতি , না পূজা।
প্রেম কোন প্রাপ্তি নয়, কোন লালসা নয় প্রেম।
কোন লাভ বা ক্ষতিও নয় প্রেম।
প্রেম কোন হুঁশিয়ারি নয়, করুনাও নয়,এমনকি কোন জিতে নেওয়া যুদ্ধও নয়।
প্রতিভা নয়, পুরস্কার নয়, রেওয়াজ কিম্বা রীতিও নয়।
দয়া বা দান কোনটায় নয় ।
এ কোন বীজ নয় যে বপন করে যাবো।
এ এক সুগন্ধ ,কিন্তু সুগন্ধের পরিচয় নয়।

বেদনা -স্বান্তনা- সন্দেহ-বিশ্বাস-জেদ, হুশ ও কামনার এক অনুভুতির গর্ভে
জন্মান এক সম্পর্ক হল প্রেম।
বা সম্বন্ধ কোন দুই প্রানের, দুই আত্মার, দুই অস্তিত্বের!
জন্ম নেয়, বড় হয়, প্রাচীন হয় না কখনো।

মাটিতে পালিত এক ব্যাথাতুর ঠাণ্ডা রোদ্দুরের নীচে
শিকড় ও স্থলের এক ফসল।
কেটে যায় কিন্তু কখনো ভাগ হয় না।

মাটি,জল, হাওয়া কিছু আলো ও সময় কিছু।

যখন বীজের চোখে উঁকি দিই
তখন সেই চারা ঘাড় উঁচু করে নিজের মুখ ,নাক, নজর দেখায়।
গাছের পাতায় পাতায় কিছু প্রশ্ন আছে ,উত্তরও রয়েছে কিছু ।
কোন মাটির প্রসব ছিল সে?
কোন ঋতু পালুন পোষণ করেছে
আর রোদ দিয়েছে তাকে,
যে গোছাল হয়ে উঠেছে তার ডালপালা?

কতকগুলি পাতার মুখ উপরের দিকে।
আকাশের দিকে তাকায়।
আর কিছু নীচের দিকে ঝুলে থাকে,
দুঃখ-ভারাক্রান্ত,কিন্তু
শাখার শিরায় শিরায় বইতে থাকা জলের সাথে যুক্ত,
মাটির নীচে থাকা বীজ কে প্রশ্ন করে-

"আমি তো তুমি নও?
তবুও জিজ্ঞেস করি
আমি তোমার থেকে না তুমি আমার থেকে?"

প্রেম যদি সেই বীজ হয়,
তাহলে প্রেম এক প্রশ্ন,

এবং উত্তরও............