সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

প্রতিবেদন - এক দেশ,এক কারণ, এক দাবী

একটি প্রতিবেদন
শাহবাগ প্রতিবাদ: এক দেশ,এক কারণ,এক দাবী


শিরীন সুলতানা

আশুলিয়া,ঢাকা


প্রজন্ম চত্বর। কিছুদিন আগেও যাকে সবাই চিনতো শাহবাগ মোড় নামে। শহিদ জননী জাহানারা ইমাম যে মশাল জ্বালিয়ে গেছেন, শক্ত করে তা আজ ধরে আছে তরুণ প্রজন্ম। কিভাবে?

এখন থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্তির জন্য যখন সংগ্রাম করছিল এদেশের আপামর জনতা তখন এদেশেরই কিছু মানুষ সরাসরি সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল, কিছু মানুষ সংগ্রাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। সংখ্যায় তারা খুব বেশি একটা ছিল না । একটা সময় সেই সব মুক্তিকামী জনতার সংগ্রাম সফল হল, আমরা... ...পেলাম স্বাধীন বাংলাদেশ । আর সেই সময় যারা মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করেছিল বা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল, তাদেরকে আমরা রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেছি । অনেক আগেই এসব দেশাদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া উচিত ছিল কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তা করতে পারিনি ।
কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠী নয়,এদেশের আপামর জনগণের চার যুগের দাবী- এই সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা হোক। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল,তারা জনগণের দীর্ঘদিনের এই দাবী পূরণ করবেন। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রথম রায় ঘোষিত হয় ২১জানুয়ারী। ঐ মামলায় পলাতক আবুল কালাম ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা,ধর্ষণ,লুট,অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয় ট্রাইবুনাল। রায় ঘোষণার পরেই সারাদেশের মানুষ সেদিন আনন্দে মিছিল করে। কিন্তু ঠিক একই অপরাধে দন্ডিত,কারাগারে বন্দী কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লাকে যখন ৪ফেব্রুয়ারী যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে ট্রাইবুনাল;সারাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফেসবুকে ওঠে ঝড়, 'ব্লগার এণ্ড অনলাইন এক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক' নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ঐদিনই এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে শাহবাগে সকলকে অনলাইনেই আন্দোলনের ডাক দেয়। তাদের এই আহবান অভুতপূর্ব সাড়া ফেলে দেয় পুরো দেশজুড়ে। এর পরের কাহিনী কেবলই ইতিহাস।
আজ টানা ১৪দিন বিরামহীনভাবে চলছে এই আন্দোলন,স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। এই আন্দোলন শুধু শাহবাগেই আটকে থাকেনি,দেশের আনাচে-কানাচে তৈরি হতে থাকে টুকরো টুকরো শাহবাগ। এমনকি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাঙালীরা শাহবাগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সেখান থেকেই নানা প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করতে থাকেন। ১৩'র এই শাহবাগ আন্দোলনকে সবাই তুলনা করছে ৭১'এর স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে। এই তুলনা মোটেও অযৌক্তিক নয়। ইতিহাসের পুনরাবৃতির ন্যায় এই আন্দোলনও শুরু হয়েছিল একটা পরিচয়কেই সামনে রেখে ...... বাঙ্গালী। বলা হয়েছিল,যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান,রাজাকারের ফাঁসি চান-তারা এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করুন। দেশে-দেশের বাইরে কোটিপ্রাণ বাঙ্গালী আজ আমরা একসাথে হয়েছি মননে- চেতনায় সেই একটাই দাবী নিয়ে-রাজাকারের ফাঁসি চাই। ১২ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪.০০থেকে ৪.০৩ পর্যন্ত সমগ্র দেশের মানুষ,দেশের বাইরে যেখানে যত বাঙালী আছেন-একযোগে তিনমিনিটের জন্য নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করে। ১৪ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৭.০০টায় সমগ্র দেশে,দেশের বাইরের প্রবাসী বাঙালীরা একযোগে একটি করে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন এই সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক হিসেবে।
আমাদের আন্দোলনের ফসল ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে। গতকালই আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধনের বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। এই আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবী,জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা। কারণ জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো, অন্যরা নয়। তাই এই দাবীকে ভিন্নভাবে দেখার অবকাশ নেই। আন্দোলনকে বানচাল করে দেওয়ার জন্য,ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু একাত্তরের রাজাকারগুলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পথের বাধা হতে পারেনি, এখনকার রাজাকারগুলোও পারবে না । লাখো জনতার ফুত্‍কারে নিমিষেই তারা বিলীন হয়ে যাবে । ইতিমধ্যে আমাদের একজন ব্লগার রাজীব হায়দার(থাবা বাবা) নিহত হয়েছেন বিরোধী শক্তির হাতে। কিন্তু বিভেদ আর অনৈক্যের সময় এখন নয়। আমরা যে পথে এসেছি, ফিরে যাবার উপায় আর নেই। সংগ্রাম চলছে, চলবে।
বাঙ্গালীর ইতিহাস পরাজয়ের নয়,বিজয়ের। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই,অপেক্ষা এখন কেবল আরেকটি ১৬ডিসেম্বরের। জয় বাংলা।



0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন