সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

স্মৃতিচারণ - সুদীপ্তা চ্যাটার্জ্জী (বুয়া)

স্মৃতিচারণ
সুদীপ্তা চ্যাটার্জ্জী (বুয়া)

এই প্রবাসে

এক যুগের ও বেশি হয়ে গেল " এই প্রবাসে ", কোনদিন ভাবিনি আমার এই প্রবাসের অভিজ্ঞতা কাউকে শোনাব ।তবু কি জানি কোন খেয়ালের বশে এক বন্ধুর অনুরোধে লিখেই ফেললাম, আমার এই প্রবাসের অভিজ্ঞতা।হয়ত এই লেখা কোনদিন কোথাও ছাপা হবে না, তবুও পিছু ফিরে তাকালে মনে হয়, এই তো সেদিন, কলকাতা থেকে, পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব ছেড়ে,পনেরো দিনের চেনা এক মানুষের হাত ধরে পাড়ি দিলাম এক অজানা দেশে ...

স্টপ ওভার ছিল লন্ডন, হিথরো এয়ারপোর্টে এসে পার্থ বলল এইবার চেনজ করে নাও নইলে JFK তে নেমে ঠান্ডা তে জমে যাবে.অতএব শাড়ি ঢুকলো ক্যারিঅন এ বেরোলো জীনস,স্নিকার,পুলোভার. JFK তে নেমে দেখলাম প্রখর,পার্থর রুমমেট দুটো বড় জ্যাকেট নিয়ে আমাদের পিকআপ করতে এসেছে .

আজীবন কেটেছে নর্থ বেঙ্গল এর ছোট্ট এক শহরে ,কলেজ, ইউনিভের্সিটি সেও আর এক পাহাড়ি শহরে, কলকাতার জনবহুল বাস ট্রেনে চলাফেরা করতে হবে সেই ভয়ে কলকাতায় পড়তে যেতে চায় নি যে মেয়ে, তার কাছে আকাশপথে এই নতুন দেশে পাড়ি দেওয়া যে কি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সেটা নিশ্চয়ই কাউকে বলে দিতে হবে না । সারাটা পথ কেটেছে অজানা আশঙ্কায়, চোখের জল দেখে এয়ারহোস্টেস এসে বার বার জিগ্যেস করেছে,

- "is everything alright mam?

কিন্তু পথের সমস্ত ক্লান্তি আশংকা কেটে গেল এয়ারপোর্টের বাইরে বেড়িয়ে , সাদা তুষারে ঢাকা দৃশ্যপট দেখে, আমেরিকার সাথে তেমন পরিচয় ছিল না এযুগের ছেলে মেয়ে দের মতো । "শংকর" এর বই আর "আলোলিকা "দির লেখা পরে যেটুকু জানা , কিন্তু সেই ডিসেম্বরের ঝকঝকে আলোতে তুষারে ঢাকা সন্ধ্যে সব কিছু ভুলিয়ে দিল। সাদা ক্রিস্টাল এর মত বরফে ঢাকা নিস্পত্র গাছের শাখা-প্রশাখা ঠিক যেন এক ক্রিস্টাল স্কাল্পচার । বরফে ঢাকা ইলেকট্রিক এর তারও যে এত সুন্দর লাগতে পারে ভাবিনি|

বিবাহিত জীবন এর শুরুতেই আমার গন্তব্য নিউ জার্সির তিন বন্ধুর বাচেলার্স ডেন, সেও এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সারাটা রাস্তা দুই বন্ধু বোঝাতে বোঝাতে চলেছে ..

-লিফট বলবে না এলিভেটর বলবে, ফ্ল্যাট বলবে না এপার্টমেন্ট বলবে ,স্কেডিউল বলবে না,এডুকেশন বলবে না ,"থ্যান্কইউ" বললে "নো মেনসন " বলবে না "ওয়েল কাম" বলবে..

শব্দগুলো অদ্ভুত লাগছিল কানে , জানি আজকের যুগের নতুন এদেশে আসা কাউকে এসব বলে দিতে হয় না হয়তো, ,কিন্তু আমি বলছি পনেরো বছর আগের কথা । প্রথম ঝটকাটা লাগলো যখন রাতের খাওয়া খেতে ঢুকলাম ‘ম্যাকডোনাল্ডস ‘ এ , দেখতে পেলাম এই ঠান্ডাতেও ড্রিঙ্কসে বরফের টুকরো ভাসছে, আসলে বরফে ড্রিঙ্কস মেশাচ্ছে , ঠান্ডাতে গরম চা বা কফিতে অভ্যস্ত আমি বললাম,

- 'I want my drink without ice .'

অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো বাচ্চা ছেলেটা, প্রখর এসে বলল

- "no ice please"........

চলে এলো বরফ ছাড়া ড্রিঙ্কস| বুঝলাম, অনেক কিছু শিখতে হবে , ঠান্ডাতে জমে আরো ঠান্ডা খেতে হবে ,ব্যাকরণ ভোলা বিদেশী ভাষায় সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হবে

-'you don't no nothing '.....

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন