সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

স্মৃতিচারণ - সুদীপ্তা চ্যাটার্জ্জী

প্রবাসীর পত্র
সুদীপ্তা চ্যাটার্জ্জী


(পর্ব - ২)

এদেশে যারা নতুন আসে তাদের সবাইকে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়,হয়ত তার কিছু আনন্দের, কিছু দুঃখের, এর পর থাকে অবাক করা অদ্ভুত সব ঘটনা । আমার ঝুলিতেও আছে তেমনি অনেক গল্প ,কিছু নিজের অভিজ্ঞতা কিছু অন্য কারো কাছ থেকে শোনা ঘটনা। হতেও পারে এই ঘটনা কেউ কেউ হয়ত পড়েও ফেলেছেন অন্য কোন ব্লগে ,যাই হোক তবুও জানাতে ইচ্ছে করছে .. সেই রকম একটি গল্প মনে পড়ছে,এক বন্ধুর কাছে শোনা গল্প ,সত্যি না মিথ্যে তা কিন্তু জানি না ...

এদেশে এসে সবার প্রথম লক্ষ্য থাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া ,কেউ কেউ IDP (international driving license) নিয়ে আসেন তবে তাদের ও এক বছর পর টেস্ট দিতে হয় । এই পরীক্ষাতে পাস করা আমাদের মানে ভারতীয় দের কাছে এক নতুন চ্যালেঞ্জ। লিখিত পরীক্ষা তেমন ঝামেলার নয় ,বই মুখস্ত করে উগরে দিতে আমরা উস্তাদ,ঝামেলায় পড়ি রোড টেস্ট এ,মোটামুটি সবাই এই রোড টেস্টে পাশ করার জন্য কিছু প্র্যাকটিস লেসন নিয়ে থাকেন ।

একবার একজন বঙ্গভাষীর কপালে জুটল এক সাদা চামড়ার হুঁকো মুখো ড্রাইভিং টিচার , ৬০/৭০ মাইল এ ছুটে চলা ৪ ওয়ে লেনে হাজার হাজার গাড়ির মাঝে, তিনি ওই দেশী ভাই কে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এনাদের পাশে বসে নিজের দক্ষতার পরীক্ষা দেওয়া কারো জন্যই খুব একটা আনন্দের অনুভুতি না ,আর এই দেশী ভাই টি তো খুব কম দিন হলো এদেশে এসেছিলেন ।

নিয়ম অনুযায়ী,যে গাড়ি প্রথম ক্রসিং এ আসবে, সেই গাড়ি একটু থেমে ,চার দিকে দেখে আগে যাবে ,পরে আসা গাড়ি পরে যাবে । এদিকে সেই দেশী ভাই সেই যে ক্রসিং এ এসে দাঁড়িয়েছেন এর পর আর নড়েন ও না চড়েন ও না ,

বিরক্ত শিক্ষক প্রশ্ন করলেন 'Exactly how long are you planning to stay here ?'

পরীক্ষার্থীর উত্তর 'according to my visa I can stay 4 -6 years, it all depends on my job '

বলা বাহুল্য এর পর তিনি ড্রাইভিং এর অনুমতি পেয়েছিলেন কিনা আমার আর জানা নেই।

এর পরের ঘটনা আমাদের এক বন্ধুর ,ইনিও তখন নতুন এসেছেন,IDP নিয়ে নিউ জার্সির সবচেয়ে পুরনো রাস্তা “ রুট ওয়ান” দিয়ে গাড়ি নিয়ে অফিসে চলেছেন,কলকাতার রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছেন,সেই নিয়মে রাস্তার বা দিক (লেফট লেনে) দিয়ে চলছেন নিজের স্পীডে,এদেশের নিয়ম কানুন এতটা জানেননা ,পাশ দিয়ে সব গাড়ি হর্ন বাজিয়ে চলে যাচ্ছে । কলকাতার রাস্তায় হর্ন শুনেঅভ্যস্থ কানে অস্বাভাবিক কিছু ঠেকছে না। কিছু পরে দেখলেন লাল হলুদ লাইট জ্বালিয়ে সাদা গাড়ি পেছনে আসছে ,উনি তখনও চলছেন নিজের খেয়ালে ,আসলে লেফট লেন পাসিং লেন,স্পীড লিমিট মেনে জোড়ে চালিয়ে বেড়িয়ে যাওয়াই উচিত।এখানে স্পীড লিমিট ক্রস করলেও যেমন ফাইন দিতে হয় স্পিড লিমিটের নিচে চালিয়ে ট্র্যাফিক স্লো করলেও ফাইন দিতে হয়। কিন্তু এসব নিয়ম এর কিছুই জানেন না তিনি । এও জানেন না কপ পেছনে এসে লাইট জ্বালিয়ে দিলে সাইডে দাঁড়িয়ে যেতে হয় ।

হঠাৎ তিনি দেখলেন চারদিক থেকে পুলিসের গাড়ি তাকে ঘিরে ফেলেছে ,তারপর শুনলেন PAসিস্টেম এ (মাইকে) বলছে “ পুল ওভার টু ইওর সাইড” বুঝলেন ভালোই ঝামেলা করেছেন ,ভয়ে হাত পা ঠান্ডা, ডেপুটি এসে দাঁড়ালেন জানলার পাশে। উনি তাকে বিনয়ের সাথে জিগাসা করলেন “ ডীড আই ডু এনিথিং রং আঙ্কেল ?”

দেশে আমাদের অভ্যেস পুলিসকে মামা বলা,এত পুলিস দেখে ঘাবড়ে গিয়ে উনি কি সম্মোধন করবেন ভুলে গিয়ে মামা কে আঙ্কেল করে দিয়েছেন ।সম্মোধন শুনে কপ এর মনের অবস্থা কি হয়েছিল জানিনা ,তবে তার পরের প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা জবাব দিলেন সেই শুনে তার মনের অবস্থা কি হয়েছিল সেটা বলাই বাহুল্য ..এর পর নিয়ম অনুযায়ী পুলিস জিগ্যেস করলো

"where are you coming from sir?”' (বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইছেন ফাইনের টিকিট পাঠাবে) ।

ওনার উত্তর ঃ- “ from India” !

Cop এর উত্তর:-“that makes sense, why are you driving so slowly!! It's really a long way from India to New Jersey, maybe you are too tired to drive .So sir, let’s go. Take some rest on our car.

আমার নিজের ড্রাইভিং টেস্ট এর ঘটনাও কম মজার না ...এর পর সেই সব শোনাবার ইচ্ছে রইলো ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন