সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

স্মৃতিচারণ - মধুছন্দা পাল




ছোটবেলা -২ 

মধুছন্দা পাল



আমাদের শহরে বাঙালিদের দুর্গাপুজো হত বাড়ি থেকে বেশ দূরে ,একলা যেতে পারতামনা দাদাদের কেউ না কেউ সারাদিন যাওয়া আসা করত ,কারো সাইকেলের রডে উঠে বসলেই হল । দাদারা পৌঁছে দিয়ে নিজেদের আড্ডায় চলে যেত সেখানে তখন রিহার্সাল চলছে ওদের নাটকের । বাড়ী ফেরার জন্যে চিন্তা ছিলনা বৌদিরা বা কাকিমা জ্যাঠাইমারা কেউনা কেউ আসতো তাদের সঙ্গে ফিরতাম । যদিও মনে হত আরও একটু থাকিনা কেন !

দুর্গাবাড়ী র বারোয়ারী পুজো । সারাদিন বাঙ্গালীদের ভিড়ে জমজমাট ।একচালার প্রতিমা ,খুব বেশি বড় নয় তা -ই দেখে দেখে আশ মিটতনা । পূজো করতেন মাখন ভট্টাচার্য । বৃদ্ধ মানুষ । সন্ধ্যা বেলা আরতি করার সময় মনে হত যেন কিছু তে ভর করেছে । নেশা গ্রস্তর মত নেচে নেচে বহুক্ষন ধরে করতেন আরতি । চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তো । মুখে মা –মা ডাক । সাধারন আলো । ধুনোর ধোঁয়ায় আবছা ঠাকুরের মুখ ,মনে হত জীবন্ত । তেমন কোন জাঁক জমক নেই কিন্তু কি যেন ছিল সেই পুজোয়! মন খুশীতে ভরে উঠত ।

পাকামন্দির দুর্গাবাড়ির ।সামনে খোলা মাঠে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে ,স্টেজ বেঁধে রোজ সন্ধ্যেবেলা নানান অনুষ্ঠান হত। আমার দাদাদের ক্লাব একদিন নাটক করত ।দাদা পিসিমার থান ,জ্যাঠাইমার সেমিজ , বউদিদের শাড়ি নিয়ে যেত পরে নাটক করবে বলে ,একবার বড় বউদির নতুন ব্যঙ্গালোর শাড়ি হারিয়ে এল ,খুব বকুনি খেল বাড়িতে । বৌদি তো শাড়ীর দুঃখে কেঁদেকেটে একসা !

এক পুজোয় মহাভারতের কোন অংশ অভিনয় করেছিল দাদাদের ক্লাব । দাদা যুধিষ্ঠির । কি যে বিড়বিড় করে বলল বোঝাতো গেলইনা শোনা ও গেলনা ভালো করে । বাড়ী ফেরার পর মা সে কথা বললে দাদা উত্তর দিল “ যুধিষ্ঠির কেমন ভদ্রলোক ছিলেন জাননা ? খুব আস্তে কথা বলতেন ।”

একবার হোল পশুরামের ‘ ভুশুণ্ডির মাঠ ।’ পর্দার ওপরে ছায়া ফেলে ভুতেদের করা সেই নাটক দেখে আমরা তো একেবারে যাকে বলে “বাক্যরহিত । ”

গঙ্গার ধারে অনেকদিনের পুরনো ‘ বুঢ়ানাথ ’এর মন্দির,শিবের নাম । বিশাল বড় চত্বর। নবমির দিন সেখানে পাঁঠা বলি হতো মনে আছে । মাএরা সেখানে নবমীর দিনই গঙ্গা স্নান করতে যেত । গঙ্গা এখানে বিশাল চওড়া , এপার ওপার দেখা যায়না প্রায় । আমরা ছোটরা পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম । আমাদের মাথায় গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিত মা। তারপর মেজ্যাঠাইমা আর মা একদিকে ছোটকাকীমা আর জ্যাঠাইমা আর একদিকে ,আর একদিকে সেজজ্যাঠাইমা আর ন’কাকীমা একে অপরের ওপর হাত (বাহু) ধরে এক এক করে ডুব দিত।

নবমীর দিন দেহাত থেকে দেহাতীরা আসতো শহরের পুজো দেখতে । হলদে আর গোলাপি রঙে ছোপান শাড়ী ধুতি পরে । সব এক সঙ্গে হাত ধরে হাঁটতো রাস্তায় । মাঝে মাঝে খুব মজা হতো কোন গাড়ী হয়তো পেছন থেকে হর্ন দিল , ওরা সব এক সঙ্গে হুড়মুড় করে একদিকে এ ওর ঘাড়ে গিয়ে পড়ল ।তবু হাত ছাড়বেনা কিছুতেই ।

বিজয়াদশমীর দিন অনেক লোকজন আসতো বাড়ীতে । পুরোন বাঙালী পরিবার বলে অনেকেই দেখা করতে আসতেন । আমাদের বাড়ী লোকজনের ভিড়ে গমগম করতো । পিসিমা তার বিশেষ আসনে বসতো । আমরা কাছে বসে দুর্গানাম লিখতাম লালকালী দিয়ে । তারপর পিসিমা ছোট্ট রূপোর গ্লাস থেকে মুখে একটু সিদ্ধি ঢেলে দিত । নিয়ম । নিয়মের বাইরের সিদ্ধি হতো ছোটকাকা ,মা আর ছোটকাকীমার উৎসাহে ।বেশী করে । বড়দের অনেকেই বেশী রাতে আরও বড়রা ঘুমিয়ে পড়লে সেই সিদ্ধি খেয়ে হাসাহাসি করতো । নারী পুরুষ নির্বিশেষে। পরদিন কারো কোন বেফাঁস কথায় জানতে পারতাম ।

আমাদের কোজাগরী লক্ষ্মীপূজোর নিয়ম ছিলনা ।কালীপুজোরদিন মহা লক্ষ্মীর পূজো হত ।



0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন