সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

কবিতা - সূর্যস্নাত বসু



নিম্নমধ্যবিত্ত 
সূর্যস্নাত বসু


তিন বাটি দই, গঙ্গারামপুরেরে । একুশ টাকা । একটা আস্তো কলার মোচা, আর পাঠা
এই নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ কাটত । মাঝে দু একবার মাছের ঝোল, চকলেট আইসক্রিম ।
ক্যাডবেরী । এর বেশী নয় ।

পুজোর ঠিক একমাস আগে মদনলাল ব্রীজমোহন । তিন চারটে শাড়ি, হংসরাজে আমার
চারটে হাফপ্যান্ট দুটো টিশার্ট, দুটো জামা---সপ্তমী থেকে দশমী অব্দি । এ ক্লাস ।
এছাড়া সস্তার ক্যাপ বন্দুক, সাথে এক প্যাকেট বুড়িমার বাজি । চরকা বোম্ব ।
আর বাইরে অনেক কথা ।

মনে পড়ে,বাজার শেষে ফেরার পথে রোজ রিক্সায় আমি নানা ধরণের বায়না করতাম,
মা-বাবার ঝগড়া হত,দু তিন রকমের চড়ও খেতাম । রিক্সা চলত । কখনও দুজনের
হাত ধরে হাঁটতাম । ভিড় বাসে বাড়ি ফিরতাম । বাবা হিসেবের খাতা বাড়িয়ে দিত ।
মা পাশ ফিরে ঘুমোতে যেত ।
ঘুম আসত না ।

তবে এখন ,এই যে আমার বড় হয়ে ওঠা, এর মধ্যে অনেককিছুই বদলেছে
দামী খেলনা থেকে চকলেটপ্রেম, সব কমেছে । বুঝতে পারি । আর হ্যাঁ, একটা
সুখবর, এখন আর আমার তেমন কোন আবদার নেই, ছোট্ট একটা চাহিদা
বলতে রোজ রাতে ঘুমোনোর আগে বাবার মতই হিসেব করি,

আবদার কিনি
আবদার বেচি ...



বাবার অনেক বয়স হয়েছে । এই বয়সে
প্রায় সবকিছুই ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক ।
আর বাদবাকিদের কথা ছেড়েই দিলাম
মাঝেমধ্যে নিজেকে চিনতেই ভুল হয় তাঁর ।
বাজারঘাট, হিসেবপত্তর, ঘা বসানো---এসব
স্মৃতি থেকে তুলে দেওয়া তো রোজকার ঘটনা ।
অনেক ডাক্তার, বৈদ্য, কবিরাজ, হাকিম
দেখানো হল, বকবকবক থেকে ইলেকট্রিক শক
সব কিছুই এল, কিন্তু কাজের কাজ হল কই ?
অতঃপর আর কোন উপায় না পেয়ে কোত্থেকে এক
পক্ষীসদ্দৃশ এবং অত্যন্ত নমনীয় অর্বাচীন এসে
বাবার দুহাতের মুঠোয় মা আর আমাকে বন্দী করে দিল,
আর তা দেখে উনি প্রায় একগাল হেসে বেশ স্বতঃস্ফূর্ততায়
বলে দিলেন,"হয়ত আনুমানিকতাই আমার ভুলে যাওয়ার কারণ ।"




0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন