শিব, পার্বতী আর গঙ্গা...
ফুল্লরা নাগ
কোন কোন পুরাণ বলে পার্বতী আর গঙ্গা নাকি সতীন... দেবাদিদেব মহাদেবের দুই স্ত্রী...
তা, ভোলানাথ নাকি গঙ্গাকেই বেশী ভালবাসেন, একদম মাথায় করে রেখে দিয়েছেন ... আর গিরিরাজের দুহিতা পর্বত নিবাসিনী পার্বতী নাকি মোটেও পাত্তা পান না... এই নিয়ে মা মেনকার কত অনুযোগ...
অন্নদা মঙ্গলে দেবী স্বয়ং নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,
গোত্রের প্রধান পিতা মুখবংশজাত।
পরমকুলীন স্বামী বন্দবংশখ্যাত।।
পিতামহ দিলা মোরে অন্নপূর্ণা নাম।
অনেকের পতি তেঁই পতি মোর বাম।।
অতিবড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ।
কোন গুণ নাহি তাঁর কপালে আগুন।।
কুকথায় পঞ্চমুখ কণ্ঠভরা বিষ।
কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ।।
গঙ্গা নামে সতা তার তরঙ্গ এমনি।
জীবনস্বরূপা সে স্বামীর শিরোমণি।।
ভূত নাচাইয়া পতি ফেঘরে ঘরে।
না মরে পাষাণ বাপ দিলা হেন বরে।।
অভিমানে সমুদ্রেতে ঝাঁপ দিলা ভাই।
যে মোরে আপনা ভাবে তারি ঘরে যাই।।
পড়তে এ সব বেশ লাগে... তবে ভাবি... কি নিপুন ভাবে কত বড় এক তত্ব কথা কি সহজ ভাবে পরিবেশন করেছেন ভরত চন্দ্র রায় গুনাকর... আবার ভাবি, শুধু রায় গুনাকর কেন? আঠারোটা বোধ হয় পুরাণ আছে আমাদের... সবার মাঝেই ত তত্ব কথা এমনি ভাবেই লুকিয়ে আছে...
মহাদেব... শিব... অনাদি অনন্ত... কত রূপে বিরাজ করছেন তিনি...
একধারে তিনি পঞ্চানন... পাঁচ টি তাঁর আনন বা মুখ... আর নয়ন তিনটি... তৃতীয়টি তাঁর জ্ঞান নয়ন... জ্ঞান ত’ অগ্নি স্বরূপ... সব আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে চারিদিক আলোকিত করে তোলে। এই রূপে তিনি সগুণ ঈশ্বর... ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা... জীবের নিয়ন্তা... দেবী তাই ত বললেন, “ভূত নাচাইয়া পতি ফেরে ঘরে ঘরে”। পঞ্চভুত ত’ তাঁর ইঙ্গিতেই নাচছে। আরও বলছেন দেবী, “অনেকের পতি তেঁই পতি মোর বাম।” বিশ্বনাথ তিনি; তিনি যে জগতের পতি... হলাহল পান করে তিনিই ত’ সৃষ্টি রক্ষা করেছিলেন... তাই ত তাঁর কণ্ঠ ভরা বিষ। “কুকথায় পঞ্চমুখ” – তারও যেন কি একটা অর্থ আছে... কুকথা মানে কিন্ত গালাগালি বা খারাপ কথা নয়... সেকি চতুর্বেদেরও ওপারে যে তত্ব আছে তারই ইঙ্গিতই করছে?
তবে, এইখানেই শেষ নয়... অন্য আরেক দিক দিয়ে দেখতে গেলে শিব নির্গুণ ব্রহ্মও বটেন। তাই ত দেবী বললেন, “অতিবড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ। কোন গুণ নাহি তাঁর কপালে আগুন” ...
আবার জীব রূপে এই শিবই ত’ এই বিশ্বচরাচর ছেয়ে আছেন... আপন প্রকৃতিকে অবলম্বন করে তিনিই ত জীব সেজে হাসছেন, কাঁদছেন, নাচছেন... সংসার সংসার খেলা খেলে চলেছেন...
অবশ্য জীব সাজতে গিয়ে শিব কে প্রকৃতির সাহায্য নিতে হয়েছে ... শাস্ত্র বলে, প্রকৃতির দুইটি রূপ... পরা আর অপরা...
গিরিরাজকন্যা পার্বতী... শান্ত সমাহিত... সেই দৈবী পরা প্রকৃতির প্রতীক...
আর গঙ্গা? তাঁর অপরা প্রকৃতির প্রতীক... যাকে অবলম্বন করে শিবের জীবলীলা...
তাই ত’ দেবী বলছেন, “গঙ্গা নামে সতা তার তরঙ্গ এমনি... জীবনস্বরূপা সে স্বামীর শিরোমণি”...
গঙ্গা যে উচ্ছল তরঙ্গায়িত... সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় সে চলার নেশায়...
শিবের এই বিশ্বলীলার ধারক ও বাহক সে... তাকেই অবলম্বন করে, যে স্বরূপত শিব... তার এই জীব জীব খেলা...
এ খেলা খেলা হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে... আরও কতদিন চলবে কে তা জানে?
তবে একদিন নিশ্চয়ই আসবে যেদিন হয়ত শিবের এই খেলা সাঙ্গ করার সাধ হবে... কিম্বা হয় ত এই সাধও এই খেলারই এক অঙ্গ... সে যাই হক... সেদিন শিবেরই জটা জালে আবদ্ধা হবে তরঙ্গময়ী উচ্ছল গঙ্গা... তাঁরই মঙ্গলময় স্পর্শে নিয়ন্ত্রিতা হবে তাঁর এই জীব প্রকৃতি... ধীরে ধীরে সেই চপলা প্রকৃতির মাঝে জেগে ওঠবে এক কল্যাণময় রূপ...
পর্বত কন্দরে যার জন্ম... পার্বতীর সেই সতীন... কেমন করে যেন রূপান্তরিত হতে থাকবে... আসলে তার আর পার্বতীর মধ্যে স্বরূপত ত’ কোন ভেদ নেই... তাই সাগরের বুকে নিজেকে বিলীন করে গঙ্গা আবার ফিরে যাবে সেই গিরি পর্বতের মাঝে...
পার্বতীর সতীন তখন পার্বতীরই বুকের মাঝে লীন হয়ে যাবে... আর জীব হয়ে যাবে শিব...
সেই জীব রূপী শিব তখন বলে ওঠবে, ওম তত সৎ ওম... ওম তত সৎ ওম...
ফুল্লরা নাগ
কোন কোন পুরাণ বলে পার্বতী আর গঙ্গা নাকি সতীন... দেবাদিদেব মহাদেবের দুই স্ত্রী...
তা, ভোলানাথ নাকি গঙ্গাকেই বেশী ভালবাসেন, একদম মাথায় করে রেখে দিয়েছেন ... আর গিরিরাজের দুহিতা পর্বত নিবাসিনী পার্বতী নাকি মোটেও পাত্তা পান না... এই নিয়ে মা মেনকার কত অনুযোগ...
অন্নদা মঙ্গলে দেবী স্বয়ং নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,
গোত্রের প্রধান পিতা মুখবংশজাত।
পরমকুলীন স্বামী বন্দবংশখ্যাত।।
পিতামহ দিলা মোরে অন্নপূর্ণা নাম।
অনেকের পতি তেঁই পতি মোর বাম।।
অতিবড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ।
কোন গুণ নাহি তাঁর কপালে আগুন।।
কুকথায় পঞ্চমুখ কণ্ঠভরা বিষ।
কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ।।
গঙ্গা নামে সতা তার তরঙ্গ এমনি।
জীবনস্বরূপা সে স্বামীর শিরোমণি।।
ভূত নাচাইয়া পতি ফেঘরে ঘরে।
না মরে পাষাণ বাপ দিলা হেন বরে।।
অভিমানে সমুদ্রেতে ঝাঁপ দিলা ভাই।
যে মোরে আপনা ভাবে তারি ঘরে যাই।।
পড়তে এ সব বেশ লাগে... তবে ভাবি... কি নিপুন ভাবে কত বড় এক তত্ব কথা কি সহজ ভাবে পরিবেশন করেছেন ভরত চন্দ্র রায় গুনাকর... আবার ভাবি, শুধু রায় গুনাকর কেন? আঠারোটা বোধ হয় পুরাণ আছে আমাদের... সবার মাঝেই ত তত্ব কথা এমনি ভাবেই লুকিয়ে আছে...
মহাদেব... শিব... অনাদি অনন্ত... কত রূপে বিরাজ করছেন তিনি...
একধারে তিনি পঞ্চানন... পাঁচ টি তাঁর আনন বা মুখ... আর নয়ন তিনটি... তৃতীয়টি তাঁর জ্ঞান নয়ন... জ্ঞান ত’ অগ্নি স্বরূপ... সব আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে চারিদিক আলোকিত করে তোলে। এই রূপে তিনি সগুণ ঈশ্বর... ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা... জীবের নিয়ন্তা... দেবী তাই ত বললেন, “ভূত নাচাইয়া পতি ফেরে ঘরে ঘরে”। পঞ্চভুত ত’ তাঁর ইঙ্গিতেই নাচছে। আরও বলছেন দেবী, “অনেকের পতি তেঁই পতি মোর বাম।” বিশ্বনাথ তিনি; তিনি যে জগতের পতি... হলাহল পান করে তিনিই ত’ সৃষ্টি রক্ষা করেছিলেন... তাই ত তাঁর কণ্ঠ ভরা বিষ। “কুকথায় পঞ্চমুখ” – তারও যেন কি একটা অর্থ আছে... কুকথা মানে কিন্ত গালাগালি বা খারাপ কথা নয়... সেকি চতুর্বেদেরও ওপারে যে তত্ব আছে তারই ইঙ্গিতই করছে?
তবে, এইখানেই শেষ নয়... অন্য আরেক দিক দিয়ে দেখতে গেলে শিব নির্গুণ ব্রহ্মও বটেন। তাই ত দেবী বললেন, “অতিবড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ। কোন গুণ নাহি তাঁর কপালে আগুন” ...
আবার জীব রূপে এই শিবই ত’ এই বিশ্বচরাচর ছেয়ে আছেন... আপন প্রকৃতিকে অবলম্বন করে তিনিই ত জীব সেজে হাসছেন, কাঁদছেন, নাচছেন... সংসার সংসার খেলা খেলে চলেছেন...
অবশ্য জীব সাজতে গিয়ে শিব কে প্রকৃতির সাহায্য নিতে হয়েছে ... শাস্ত্র বলে, প্রকৃতির দুইটি রূপ... পরা আর অপরা...
গিরিরাজকন্যা পার্বতী... শান্ত সমাহিত... সেই দৈবী পরা প্রকৃতির প্রতীক...
আর গঙ্গা? তাঁর অপরা প্রকৃতির প্রতীক... যাকে অবলম্বন করে শিবের জীবলীলা...
তাই ত’ দেবী বলছেন, “গঙ্গা নামে সতা তার তরঙ্গ এমনি... জীবনস্বরূপা সে স্বামীর শিরোমণি”...
গঙ্গা যে উচ্ছল তরঙ্গায়িত... সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় সে চলার নেশায়...
শিবের এই বিশ্বলীলার ধারক ও বাহক সে... তাকেই অবলম্বন করে, যে স্বরূপত শিব... তার এই জীব জীব খেলা...
এ খেলা খেলা হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে... আরও কতদিন চলবে কে তা জানে?
তবে একদিন নিশ্চয়ই আসবে যেদিন হয়ত শিবের এই খেলা সাঙ্গ করার সাধ হবে... কিম্বা হয় ত এই সাধও এই খেলারই এক অঙ্গ... সে যাই হক... সেদিন শিবেরই জটা জালে আবদ্ধা হবে তরঙ্গময়ী উচ্ছল গঙ্গা... তাঁরই মঙ্গলময় স্পর্শে নিয়ন্ত্রিতা হবে তাঁর এই জীব প্রকৃতি... ধীরে ধীরে সেই চপলা প্রকৃতির মাঝে জেগে ওঠবে এক কল্যাণময় রূপ...
পর্বত কন্দরে যার জন্ম... পার্বতীর সেই সতীন... কেমন করে যেন রূপান্তরিত হতে থাকবে... আসলে তার আর পার্বতীর মধ্যে স্বরূপত ত’ কোন ভেদ নেই... তাই সাগরের বুকে নিজেকে বিলীন করে গঙ্গা আবার ফিরে যাবে সেই গিরি পর্বতের মাঝে...
পার্বতীর সতীন তখন পার্বতীরই বুকের মাঝে লীন হয়ে যাবে... আর জীব হয়ে যাবে শিব...
সেই জীব রূপী শিব তখন বলে ওঠবে, ওম তত সৎ ওম... ওম তত সৎ ওম...
darun laglo
উত্তরমুছুনঅন্নপূর্ণার পিতামহের নাম কি
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুন