সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

স্মৃতি-চারণ - সীমা ব্যানার্জ্জী রায়

এ ব্যথা...কি যে ব্যথা!
সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়



ঘুম তো ছুটে গেছে কবেই, নাওয়া খাওয়াও মাথায় উঠেছে । দেশে যাওয়া না তো, যেন একটা বিরাট প্রজেক্ট শেষ করে তবে দেশে যাওয়া।

দেশে যাওয়া এ আর এমন কি ব্যাপার; সবাই তো যায়। হ্যাঁ! খাঁটি সত্যি। কিন্তু আমার প্রথম যাওয়া যেন মনে হয়েছিল বিরাট একটা ব্যাপারস্যাপার।

সকাল থেকে সংসার-এর খুঁটিনাটি সব গুছিয়ে গাছিয়ে আসার পর যেন একটু নিশ্চিন্ত। প্লেন ছাড়বার এখনও ঘন্টাখানেক দেরি। বসে আছি ডালাসের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। বড্ড ব্যস্ত এয়ারপোর্ট। শ্বেতাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গীনিদের ভিড়। তারই মধ্যে আমাদের দেশের দুচারজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশে ভারতীয় দেখলেই মনে হয় আমরা যেন কতকাল চেনা। আছি এদেশে তাও অনেকদিন হল, বাঙালী দেখলেই কথা বলার জন্য মনটা কেমন পিপাসার্ত হয়ে ওঠে, তাই দৃষ্টিও খুঁজে ফেরে বাঙ্গালীকে। বসে আছি একা, মনটা মাঝে মাঝেই চলে যাচ্ছিল কলকাতায়, একে একে ভেসে আসছিল একান্ত কাছের মানুষদের মুখগুলো।

হঠাৎ এক ভদ্রমহিলার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম – প্রিয়াংকা - ! না না, এ মহিলা প্রিয়াংকা তো নয়, সে এখানে কোথা থেকে আসবে? আর আসলে..... আমাকে কি জানাবে না? যেতে গিয়েও পা দুটো যেন গঁদের আঠায় আটকে গেল। কিন্তু কি আশ্চর্য মিল!

ঘুমিয়ে থাকা স্মৃতির গোপন গহ্বর থেকে বেরিয়ে এলো কবেকার প্রিয়াংকার কথা...... সেই প্রিয়াংকা যে ছিল অগাধ সম্পত্তির মালিকের একমাত্র সন্তান। আমার সাথেই কেটেছে ওর স্কুল আর কলেজ জীবন। ভীষণ সুন্দরী ছিল আর ছিল খুব সুন্দর একটা মনের অধিকারী। আমার আর ওর মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব।

আমার বিয়ে অনেক আগে হয়েছিল স্কুল গন্ডী পেড়োনর সাথে সাথেই একেবারে সাত পাকে বাঁধা। আর বিয়ের পরেই চলে আসতে হয়েছিল এই সুদূর মার্কিনে, নতুন জীবনের স্থায়ী ঠিকানায়। তারপর হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো, নতুন দেশকে চেনা, নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে চলতে চলতে দিন কাটছিল। প্রিয়াংকার সাথে চিঠির আদান প্রদানও চলছিল সেই সাথে নিয়মিতভাবে। ওর রগরগে প্রেমের সব গল্প লিখত আমাকে। তারপর বেশ কিছুদিন চুপচাপ।

হঠাৎ করে চিঠিতেই ওর বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ড পেয়েছিলাম। ওর হানিম্যুন-এর ছটফটে সব গল্প আর ছবি পাঠিয়েছিল। খুব খুশী হয়েছিলাম, কিন্তু তারপর আর ওর সাথে যোগাযোগ হওয়ার সুযোগ হয় নি। ঘোর সংসারী হয়ে পড়লাম। কেমন যেন দিনগুলো ছুটে পালাতে শুরু করল। কাজেই বন্ধুবান্ধবদের সাথে চিঠির আদান প্রদান কমতে কমতে একেবারেই কমে গেল। বিয়ের পর মেয়েদের যেমন হ্য় আমিও বাদ যাই নি সেই একই কেমিস্ট্রির ইকুয়েশন থেকে। কাজেই বন্ধুবান্ধবদের সাথে চিঠির আদান প্রদান কমতে কমতে একেবারেই কমে গেল।

অনেকদিন আগের কথা। তখন মাত্র আমার বিয়ে হয়েছে। থাকি ইনডিয়ানার শহরতলীতে। ওখান থেকে গিয়েছিলাম দেশে। এ দেশ থেকে সেই আমার প্রথম যাওয়া কলকাতায়।

দেশে পৌঁছেই মনে হলো এ মাটির সাথে নাড়ির এক অদ্ভুত টান। খুব আনন্দে কাটতে লাগলো দিনগুলো –সকাল থেকে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে চলেছি গাড়ি নিয়ে, বন্ধু বান্ধব আর আত্মীয়দের সাথে আড্ডা দিয়ে আর গল্প করে কাটিয়ে দিচ্ছি বেলা। আমেরিকা থেকে এসেছি বলে হয়ত, আদরের সাড়াটা আরো বেশি পাচ্ছি। ছকে বাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে এসেছি যেন মুক্ত পাখি আর মনে এসেছিল এক অবর্ণনীয় আনন্দের স্বাদ । তাই কিছুদিন বাড়ি থাকার পরেই পায়ে লাগাম দিয়ে ছুটে বেড়ানো। সে কি আনন্দ ! ভাষায় হয়ত বোঝাতে পারব না। আমারই খালি বিয়ে... সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে... হয়েছিল বন্ধুদের মধ্যে, তাই আমি আরও স্পেশাল বন্ধুমহলে। কি ভাবে দিন কাটাই বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলছিলাম ওদের।

সেদিন বেরিয়েছিলাম আমার পিসতুতো দাদার বাড়ি ম্যান্ডেভিলি গার্ডেনেস-এ যাবো বলে। গাড়ি চলছিল অসংখ্য মানুষ আর ট্রাম-বাসের ভীড় ঠেলে । হঠাৎ গড়িয়াহাটার মোড়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে চোখ পড়তেই দৃষ্টিটা আটকে গেল।

মনে হল প্রিয়াংকা দাঁড়িয়ে। পরনে হলুদ রঙ্গের শাড়ি আর চোখে আকাশনীল চশমা। দেখে খুব অবাক হলাম কারণ ওকে কখনও ট্রামে বাসে যাতায়াত করতে দেখি নি। ড্রাইভারকে একটু থামতে বলে ওখানে নামলাম। প্রিয়াংকা আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরল, আবেগ-আনন্দে বলে উঠল , “কবে এসেছিস রে?”

ওকে দেখে কেমন যেন মনে হল। বদলে গেছে অনেকটাই। ও আগে ছিল উচ্ছ্বাসে ভরপুর,লাস্যময়ী আর আহ্লাদী। এখন অনেকটাই উদাসীন। গাড়িতে তুললাম ওকে। শুরু করলাম ফেলে আসা দিনগুলোর রোমন্থন।

ও খালি আমাকেই আমার কথা জিগেস করে যাচ্ছে। বললামঃ “কি গো! কে সেই ভাগ্যবান যে কলেজের সেরা সুন্দরীকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের কাছ থেকে।” দেখলাম ও কিন্তু শুনেও না শোনার ভান করছিল। বললামঃ কিসের চিন্তায় এত মগ্ন শুনি? দেখতে দেখতে কখন ওর বাড়ি এসে গেছিল। আমি তো অবাক হয়ে ওকে জিগেস করেই ফেললাম যে, “এখানে নামাব তোকে নাকি? এখানে থাকিস?” বললঃ "হ্যাঁ! এখানেই নামিয়ে দে। একদিন তোদের বাড়ি গিয়ে অনেক আড্ডা দেওয়া যাবে রে। তুই কবে ফ্রী থাকবি আমাকে জানাস কেমন? আমার ফোন নম্বর নিয়ে নে।”

ওর বাড়ির অ্যাড্রেসও জোর করে নিয়ে নিলাম। আমি হাসতে হাসতে বললামঃ “আমাকে তোর সংসার দেখাবি না? ওরে বাবা, হিংসে করব না, একটুকুও, হল!” বললঃ “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। একদিন আসিস” বলে দেখলাম চুপ হয়ে গেল।”

একদিন ফোন না করেই ওর বাড়িতে হাজির হলাম। দেশে তো আর ফোন করে যাবার প্রয়োজন নেই, তাই একদিন রবিবার দেখে... না জানিয়েই... সকাল সকাল চলে গেলাম ওর বাসায়। দরজা খুলে দিল ওর বাড়ির কাজের মাসি। আমাকে বসতে বলে সেই মাসি ভেতরে চলে গেল। বেশ ছিমছাম সাজানো বসার ঘর। বেশি ফার্নিচার নেই তবে যা আছে বেশ সুরুচির পরিচয় পাওয়া গেল। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি ঘরের চারিদিকে। কেমন যেন একটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ঘড়ির টিক্ টিক্ আওয়াজ সময়ের সাথে খালি তার কাজ করে চলেছে।

আমাকে অবাক করে একটু পরে সাজগোজ ছাড়াই সাধারণ একটা শাড়ি পড়ে প্রিয়াংকা ঘরে এল। বসল ঠিক আমার পাশে। আমাকে বললঃ “তোকে কি সুন্দর লাগছে রে..মনে হচ্ছে তুই খুব সুখী। আমি বললাম: “~ আর তুই?”

আবার সেই নীরবতা। সর্বনাশা মেঘপুঞ্জের মতন চারিদিক ঘিরে ধরল আমায়। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললঃ “~আমি কেমন সুখী দেখবি?” আমাকে ওর পিঠের ওপর রাখা কাপড়ের আঁচল সরিয়ে দেখাল..আমি ত’ দেখে চমকে উঠলাম। এত সুন্দর মেয়েটাকে কেউ এরকম ক্ষত বিক্ষত করতে পারে? তাহলে কি.........

আমার দুইচোখে জল আসতে দেখে খুব স্বাভাবিকভাবে বললঃ “~চিন্তা করিস না, অন্ধ ভালবাসার এইটাই চরম পুরস্কার তো......এটাই আধুনিকতা... ~একদিন যার প্রেমে একেবারে হাবুডুবু, যার জন্য মা বাপিকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল ।

জানিস, মা বাপির একটুও ইচ্ছা ছিল না এই বিয়েতে... হয়ত, দূরে চলে যাব বলে, নতুবা ওর সম্বন্ধে ঠিকঠাক খবর না পাওয়ার জন্য। তাদের ইচ্ছে ছিল, মেয়ে কাছাকাছি থাকুক। সাধারণতঃ সব মায়েরাই তাই চায়। ওনারা আমার কথা চিন্তা করে তাদের একমাত্র আদরের মেয়েকে ধুম ধাম করে বিয়ে দিয়েছিলেন। আর কলেজের সবার ঈর্ষার পাত্রী হয়েছিলাম বড়লোকের হ্যান্ডসাম, অধিক সম্পত্তির অধিকারী একমাত্র সন্তানের পুত্রবধূ হতে পেরেছিলাম বলে, কারণ আমি যে ভাবে মানুষ হয়েছিলাম অনুকল্প-ই ছিল আমার যোগ্য পাত্র।“

আমি জিজ্ঞেস করে ফেললাম “অনীক? ও যে তোকে অত ভালবাসত?”

---“অনীক গরীবের ছেলে ছিল আর তার ছিল বড় দায়িত্ব ...আর আমার মতন মেয়ে ওর সঙ্গে মানাতেই তো পারতাম না ।

আজ বুঝি, টাকাটাই বড় নয় জীবনে, একটা মানুষকে তার টাকা পয়সা দিয়ে বিচার করা যায় না রে, কথায় আছে না, ~সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। একদম খাঁটী কথা। বড্ড অহংকার ছিল আমার, কি বল।”

আমি যেন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। আচ্ছা, ~“অনুকল্প তো শুনেছিলাম খুব ভাল ছেলে ছিল। তাহলে? কিন্তু হঠাৎ বদলে গেছিল কেন ?”

কথার মাঝে দেখলাম মাসি এক প্লেট চিঁড়ে, আলু -কপি ও বাদামভাজা তার সাথে বড় বড় ল্যাংচা ট্রে তে করে রেখে গেল। প্রিয়াংকার মনে ছিল আমার প্রিয় খাবার। কলেজে থাকাকালীন আমরা বান্ধবীরা প্রায়ই ওদের বাড়িতে আড্ডা দিতে যেতাম, যে যা ভালবাসত তাই ওদের বাড়ি পাওয়া যেত বলে আমরা হুড়্মূড় করে হাজির হতাম।

খেতে খেতে বললঃ “~ তোকে সব বলে একটু হালকা হই কি বল? তুই-ই তো আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলি সেই স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত। তারপর সব কেমন যেন হিজিবিজি হয়ে গেল। এত কথা মনে আছে, না বার করে দিলে হয়ত শুনবি একদিন আমি শেষ। ওর মুখে হাত দিয়ে বললামঃ “এই বললি আর যেন কোনদিন না শুনি...এই শুনতে কি আমি ছুটে এসেছি, বল?” তৃতীয়ার শশীর মত ক্ষীণ হাসি ভেসে উঠল তার মুখে।

চুপটি করে শোন এবার!!!!! পার্ক স্ট্রীটের হিন্দুস্থান হোটেলের একটা পার্টিতে অনুকল্প-র সাথে আলাপ হয়েছিল, আলাপ থেকে অন্তরঙ্গতা। তারপর বিয়ের জন্য জোরাজুরি। জানিনা নিজের অজ্ঞাতে আমিও কখন ওর প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়েছিলাম।

খালি ভাবতাম, সহচরের মতো সে এসেছে বুঝি আলো হাতে নিয়ে! নিঃস্পাপ জোছনায় অপরূপ কথাকলি ফুটে উঠেছে আমার মাটি অঙ্গন জুড়ে! অঞ্জলি ভরে এনেছে সুগন্ধি আখর, প্রেম, অলৌ্কিক সৃজনকল্প!!!

সেই বদান্যতায় আশরীর বড় স্বচ্ছ হয়ে উঠেছিলাম হঠাৎ-ই...... বিয়ে করে তো এলাম, শ্বশুরবাড়ি বলতে তখন মুম্বাই-এর পালি হিল। অনুকল্প মা বাবার সাথে থাকত, আর আমিও তাই চাইতাম একসাথে থাকার। একসাথে থাকার থিওরিটা আমার খুব পছন্দ ছিল, এই জন্য যে কোন বিপদ আচমকা ঢুকতে পারে না। জানি না সেটা আমি ঠিক বুঝেছিলাম কিনা!!

ভীষণ মদ খেত অনুকল্প, যেটা আমি একদম জানতাম না আর আমাকে সে বলেওনি। যখন মদ খেত তখন হিতাহিত জ্ঞান থাকত না। খুবই বড় পোস্টে কাজ করছিল। মুম্বাই-এর মহেন্দ্র এন্ড মহেন্দ্র কম্পানীতে প্রোডাক্সন ম্যানেজার ছিল। যখন মদ খেত না, তখন মাটির মানুষ। আর মদ খেলে ভাষা আর উগ্রতা চরমে উঠত। বুঝতে পারতাম না এইসব ভাষা বলে কি করে? আর মদই বা খেত কেন? শখে না অন্য কোন কারণে? আজও জানতে পারি নি।

ওর মা বলতেনঃ আমার জন্য-ই ও নাকি মদ খায়। আমি ওকে কেন ভালবাসা দিয়ে আটকে রাখতে পারি না। কি আশ্চর্য যুক্তি। সেই চিরাচরিত কথা। সব দোষ এই নন্দ ঘোষ। কিরকম ভালবাসায় আটকানো যায় আমার অজ্ঞাত ছিল।

কিছুদিন পরে ওর সাথে চলে গেলাম হাওয়াই, ওর একটা প্রজেক্টের কাজের জন্য। ওখানে গিয়ে হঠাৎ করে অদ্ভুত ভাবে নিজেকে বদলে নিল অনুকল্প। রোজই প্রায় দেরী করে আসত। জিগেস করলে বলতঃ “~তুমি বুঝবে না, এ তো আর দেশ নয়? দেরি হলে খেয়ে শুয়ে পড়বে। কি ভাবতাম বল তো? ভাবতাম বেশ এই দূরদেশের চাঁদ একসাথে দেখব রাতের বেলা আর স্বপ্নের ঢেউ-এ ভেসে বেড়াব দুজনায়। আদনান সামি-র “অব তুম নজর মিলাও/ অব তুম করিব আও~~”-সেই গানটা শুনতে শুনতে হারিয়ে যাব কোথাও দুজনে।

যাই হোক, ওখানে সারাদিন একা একাই থাকতে হ্ত, এখানে ওখানে ঘুরি, মল- এ যাই, নিজেও একটা ফরেন ল্যাঙ্গুইয়েজ কোর্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে দিলাম। ওখানেই আলাপ মধুরিমার সাথে। এক-ই সাথে ক্লাস করি, জানিস তো দেশের বাইরে দেশীয় কাউকে দেখলে কত ভরসা হয় মনে, তাই নয় রে?

একদিন মধুরিমার কথা অনুকল্প-কে বললাম, ও আমাকে বলল যে ওর অফিসেও নাকি দেশ থেকে একজন কাজের জন্য এসেছে, তাহলে একদিন ওদের একসঙ্গে ডাকলে কেমন হ্য়। বললামঃ- ঠিক আছে। বাহ! ভাল কথা তো। ওদের ডাকলাম আমাদের এপার্টমেণ্টে।

কি আশ্চর্য জানিস, মধুরিমার সাথে যে এল... সে ছিল অনীক। আমি ভেতরে গিয়ে দেখি আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে, আমি বেশ ঠান্ডায়ও কেমন যেন ঘামতে শুরু করেছি। অনুকল্প আমাকে অনীকের সাথে আলাপ করিয়ে দিল, কিন্তু অনীক এমন ভাব করল যেন আমাকে চেনেই না, আমাকে দেখে একেবারেই চিনতে পারল না, হয়ত ওকে না বিয়ে করার প্রতিশোধ নিল। আমিও আর আগ বাড়িয়ে কিছু বললাম না। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।

অনীক আর মধুরিমা ওখানে লিভ টুগেদার থাকত। মধুরিমা আগেই গল্প করেছিল যে, ও নাকি একজনের সাথে প্রেম করত, সে তাকে ধোঁকা দিয়েছে তাই আর বিয়ে করবে না। ওখানে এসে অনীকের সাথে আলাপ হবার পর ওরা দুজনেই ঠিক করেছে একসাথে থাকবে একদম বন্ধুর মতন। কারণ এই দূরদেশে দুজনে একসাথে থাকলে বেশ কিছু পয়সা বাঁচানো যায়, মধুরিমার তাই মত। তবে আমি আর নাম জিগেস করিনি তখন, যার সাথে মধুরিমা থাকত। ও যে অনীকের সাথে থাকত সেটা তো আর জানতাম না।

মধুরিমা আর অনুকল্প-কে দেখলাম বেশ স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছে যেন অনেকদিনের পরিচিত ওরা। অনীক হুঁ-হাঁ ছাড়া বেশি কথা বলছে না, একমনে খাবার খাচ্ছে। আমার দিকে একবারও তাকায় নি অনীক। মুখ নীচু করে খেয়েই যাচ্ছিল। আমার খুব ইচ্ছে করছিল অনীক-এর সাথে অনেক কথা বলার জন্য। কিন্তু সে তো এড়িয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মনের সব কথা উজাড় করে দি তাকে।

ওরা দুজনে তো খেয়েদেয়ে চলে গেল। ওদের মিলিয়ে যাওয়া দেখলাম দুজনে এ্যপার্টমেন্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। ঘরের ভেতরে আসলে হঠাৎ অনুকল্প আমাকে বলেঃ ~''আমি মধুরিমার মতন মেয়েই চেয়েছিলাম যে সেলফ সাফিসিয়েন্ট। আমার ভাগ্যটাই খারাপ তাই তোমার মতন মোমের পুতুলের প্রেমে পড়ে হুড়মুড় করে বিয়ে করেছি'', বলে আবার মদ খেতে শুরু করল।

আবার রাত করে ফেরা আরম্ভ করল, মাঝে মাঝে রাতে না আসাও শুরু করে দিল। একদিন খুব বরফ পড়ছে, হঠাৎ করে ইলেকট্রিসিটি চলে যেতে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম, ফোন করলাম অনুকল্প-কে। মিসড কল দেখতে পেলাম। সেদিন সারা রাত জেগে ছিলাম, না খেয়ে।

ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন অনুকল্প এসে আবার কাজে গেছে... জানতেও পারি নি। বিকেলে কাজ থেকে আসলে জিগেস করলাম যখন যে, “কাল কোথায় ছিলে?” উত্তরে পেলাম তখন এক হ্যাঁচকা ধাক্কা। মুখটা যেন এক হিংস্র বাঘ। আমি তো অবাক! এ কোন অনুকল্প? এ কি করল সে? আমার ভালবাসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল?

ভাবলাম, অনীক বোধহ্য় আমাদের কলেজ লাইফের আন্তরিকতার কথা বলেছে। তাই ওর সম্মানে লেগেছে বা অত্যধিক ভালবাসে আমাকে বোধহয় তাই,... অতীতের ভালবাসার কথা জানতে পেরে বোধহ্য় খারাপ লেগেছে।

এইসব নানান কথা মনে ভিড় করাতে আমি আসতে আসতে উঠে আবার কাজে লাগলাম। সেদিন গেল, আবার কিছুদিন পর একই দৃশ্যের সম্মুখীন হলাম। কিন্তু কেন যে এরকম করছে জানতে পারছিলাম না। আমি কথার মাঝে প্রিয়াংকা-কে জিগেস করলাম, ~~“মধুরিমার সাথে আর দেখা হয় নি তোর?”

প্রিয়াংকা বললঃ “~না, হঠাৎ করে ও ক্লাসে আসা বন্ধ করে দিল।” অনুকল্প মধুরিমার মধ্যে কোন ভালবাসা জন্মেছিল কিনা সেটা আমি জানতে পারিনি, বা বলতে পারিস জানবার সুযোগ হয় নি। সে কখনই আর অনীক বা মধুরিমার কথা বলত না, বা সময় পেত না। আর তিনজনেই তো কাজে ব্যস্ত থাকত। দেশের মতন তো আর ঘুরে ফিরে বেড়ালে চলত না, কারণ যে প্রজেক্টের জন্য গেছিল অনু, সেটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে ফিরে আসতে হবে। কাজেই, আমার মনে সন্দেহের প্রশ্নই ছিল না। আর কেনই বা করব সন্দেহ-বল? মধুরিমা তো আর সুন্দরী ছিল না... বা একটুও অ্যাট্রাক্টেড মনে হয় নি তাকে দেখে যা দেখে, সাধারণতঃ ছেলেরা...এটা অবশ্যই আমার একান্ত ধারণা। ভুল হতেও পারে।

অনুকল্প-এর প্রজেক্ট শেষ হয়ে গেলে আমরা দেশে ফিরে এলাম। দেশে এসে ও যেন আমাকে সহ্য করতে পারছিল না। কিছু বললেই আমাকে যা নয় তাই বলতে শুরু করত। আমি তো আমার মা বাপিকে কিছু জানাতেও পারছিলাম না। নিজের ইচ্ছেতেই তো বিয়ে করেছিলাম। নিজের বিবেকের কাছে মস্ত বড় পাপী মনে হচ্ছিল। বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিৎ আমার।

এইভাবে দিনের পর দিন যায়। বেশ দু তিনদিন বাড়ি আসা বন্ধ করে দিল। একে তো এই চিন্তা তারপর শ্বশুর শাশুড়ির সন্দেহপ্রবণ কথাবার্তা তে আমি আরো অতিষ্ঠ হয়ে পড়লাম। রোজই রাত করে আসত, একদিন সন্ধ্যেবেলায় আসলে এমনি অভিমানের সুরে বলেছিলামঃ ~~আজ যে বড় তাড়াতাড়ি এলে? মনে মনে কিন্তু খুউব খুশী হয়েছিলাম, জানিস। সেদিন ছিল আমার বিয়ের পর প্রথম তেইশ বছর জন্মদিন। আমি ভাবলাম আমার জন্মদিনের জন্য বোধহয় তাড়াতাড়ি এসেছে............ তার ফল এই আমার পিঠের চেহারা, দুচোখে টলটল করা জল নিয়ে বলল আমাদের নাম দেওয়া “আদুরি”। এই ছিল আমার জন্মদিনের উপহার। বাড়িতে বাঙ্গালী চাকর বাকর, শ্বশুর শাশুড়ি থাকাতেও কেউ এগিয়ে এল না আমাকে বাঁচাতে।

বুঝতে পারলাম!!!! …..স্বপ্নময় আলোগুলো আমায় অনায়াসে ভেদ করে চলে গেছে...পড়েছে অন্যত্র.......সবার অগোচরে বহুদিন পরে রাত পাহাড়ে আমি কিন্তু জেগে উঠেছিলাম...নিঃশব্দে....মনে হল চলে যাচ্ছি কোথাও... এই চলে যাওয়া মনে প্রস্থান নয়...নয় বন্ধন ছিন্ন করা... কেবল সময়ের স্রোতে গা ভাসানো...প্রাত্যহিক ব্যস্ততার ঘোরে যে জীবন কেবল সামনে এগোয়...তার হাত ধরে...নতুন পথে বন্ধুর সময়ে পথ চলা...... সেদিন না খেয়ে শুয়ে পড়লাম জানিস, কেউ এল না ডাকতে।

আচ্ছা, শ্বশুর শাশুরির একটুও কি মায়া মমতা হয় না পরের বাড়ির একটা মেয়ের জন্য। ওনারাও তো মানুষ- আমি কি অন্যায় করেছিলাম বলতে পারিস? কেন জানতে পারলাম না আমার কি অন্যায়?

আমার মতন কত মেয়ে এখনো এই রোবটের যুগে মার খাবে বলত? কি দোষ করেছিলাম আমি? কেন আমি এই শিকারের সম্মূখীন হলাম বল আমাকে? আমিও তো চেয়েছিলাম একটা সুন্দর জীবন, একটা মিষ্টি সংসার। এই চাওয়া আমার মতন সব মেয়েই তো চায়, তাই না রে? আমি যদি কোন দোষ করতাম আমাকে তো বলতে পারত অনুকল্প, না হোক ওর মা বাবাও। তারপরও না শুনলে না হয় আমার উপর অত্যাচার চালাত, আমি মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম এই ভেবে যে, আমার অন্যায়ের পুরস্কার।

কিন্তু আশ্চর্য কি জানিস, যে মাসিকে তুই দেখলি সেই মাসি পরের দিন ঘর পরিষ্কার করতে এসে আমাকে বললঃ “~বৌদি তুমি এত কষ্ট সহ্য করছ কেন? আমাদের মতন মুখ্যু সুখ্যু মানুষ তো নও। তবে কেন এত কষ্ট নিচ্ছ? আমরা গরীব হলেও সব বুঝতে পারি। তখন জানলাম আমাকে এই বাড়িতে কাজের মানুষগুলো চুপচাপ ভালবাসে। যে মনে একবার এসেছিল দুনিয়ায় আমাকে মা বাপি ছাড়া আর কেউ ভালবাসে না, সেই মন বলে দিল নাঃ ~ভাল মানুষ চারিদিকে ছড়িয়ে ছটিয়ে আছে। ভালবাসা এখনও আছে মানুষের মনে।”

আমি যেন নীরব শ্রোতা। সব কথা তখন কোথায় হারিয়ে গেছে আমার। ওর কথায় আবার ফিরে পেলাম আমার চৈতন্য।

প্রিয়াংকা তখনও বলে চলেছে ফোয়ারার মতন~~ “চিন্তা করলাম মাসির কথা, ওকে বললাম, “~মাসি আমার সাথে যাবে? তাহলে আমি একটা ভরসা পাই।

আমার মা বাপির কাছে আমি যাব না, এই বয়সে তাদের দুঃখ আমি বাড়াব না। তাদের জানতেও দেব না, তাদের প্রিয়ু ভীষণ পরীক্ষা দিচ্ছে। তারা তো বিয়ের পর থেকে কোনদিন আমার শ্বশুরবাড়িতে আসতেন না কারণ, আমার শাশুড়ি একদম তাদের পছন্দ করতেন না। আমার মা বাপি কিন্তু তাকে দেখতেন খুব স্নেহের চোখে, আমার আদর তখন মা-বাবার কাছে ভাগাভাগি হয়ে গেছিল। মা-বাপির তো অনুকল্পকে খুব পছন্দ হয়েছিল, খালি বলতেন আমরা একটা ছেলে পেলাম আর সেই ছেলের স্নেহেই তারা তাকে দেখতেন, আমার আদরে তখন ভাগ বসিয়েছিল সে। তাই হয়ত আমার শাশুমা ভয় পেতেন ছেলে হারাবার কথা ভেবে।। আজও জানি না কেন তারা আমার মা বাপিকে সহ্য করতে পারেন না। তাই মা বাপিরা আসত না আমার শ্বশুরবাড়ি। আমি তো কোন অন্যায় করি নি? আমিই যেতাম মাঝে মাঝে দেখা করতে কিন্তু শ্বশুর শাশুড়ি আমার বাপের বাড়িতে থাকা একেবারেই পছন্দ করতেন না। তাই সাত দিনের জন্য গিয়ে দেখা করেই চলে আসতাম।

কাজেই কোন সমস্যা হবে না বাপি মায়ের দিক থেকে ।

একদিন সব ছেড়ে চলে এলাম কলকাতার এই বাসায়। কেউ তো তখন বাধা দিল না ।

নিঃসন্তান মাসি এক কথায় রাজি হয়ে গেল। বলল, “আমিও মেয়েমানুষ বৌ্দি, আমার মেয়েকে কেউ এইভাবে কষ্ট দিলে কি আমি চুপ করে থাকতাম? না তাকে বাঁচাবার জন্য চেষ্টা করতাম? মা হলেই যে মানসিকতা জন্মায়, তা নয় বৌ্দি। আমি ভগবানের কৃপা থেকে বঞ্চিত, কিন্তু আজ তাঁদের দয়ায় মেয়ে পেলাম।”

জানিস তো সেই প্রথম আমি কাঁদলাম। মাসিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম বেশ খানিকক্ষণ। মাসি তার স্নেহমাখানো হাতের ছোঁয়ায় আমার মনকে শক্ত করে দিয়েছিল। এখন কি ভাবি জানিস, গরীবদের মন বলে একটা জিনিস আছে, কিন্তু টাকার গরম মানুষদের মন নেই, ওরা পাথর।”

আমি জিগেস করলামঃ ~ “অনুকল্প আর খোঁজ করে নি”?

“করেছিল মোবাইল ফোনে, তবে আমি আর আমার ঠিকানা চাইতেও ওকে দি নি। সে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল, আমার দিক থেকে আর আমি সাড়া পেলাম না। কত স্ব্প্ন দেখেছিলাম তাকে নিয়ে, সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চূরমার করে দিল সে। একটা নতুন জিনিস তৈ্রি করতে যা সময় লাগে, ভাঙ্গা জিনিস গড়তে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে এটাও আমি মনে করি পার্সোনালি। কিন্তু ভাঙতে এক সেকেন্ড, তাই না?

এইভাবেই সারা জীবন কাটিয়ে দেব ভাবছি। একটা প্রফেসর-এর পোস্ট খালি হয়েছিল বেথুনে, সেইখানেই ঢুকে গেছি। ভাগ্যিস একটু পড়াশুনা করেছিলাম। প্রেমে গা ভাসিয়ে দিই নি-আমার মতন যে সব মেয়েরা বিনা দোষে কষ্ট পায়, তাদের পাশে যদি দাঁড়াতে পারি, তবেই জীবনে আমার সার্থকতা আসবে, তাই মনে করি। তারপর না হয়, সারদা মঠে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দেব।

আর না! আর না, অনেক হয়েছে এই ভাবি, সুখের দিন আমার কাছ থেকে চলে গেছে মা বাপির জন্য একটু সিঁদূর লাগাই যাতে তারা বুঝতে না পারেন।”-বলে ম্লান হাসল।

প্রিয়াংকা বরাবরই একটু রোমান্টিক ছিল, ভেবেছিলাম ওর হানিম্যুন -এর গল্পের মতন বিবাহিত জীবনের গল্পও শোনাবে যেটা নতুন কিছু মিষ্টি মধুর স্মৃতি। কত আশা নিয়ে এসেছিলাম বন্ধুর বাড়ি, কিন্তু এ-কি শুনলাম আমি?

খুব ভাল গান গাইত, এখন ও হয়ত গাইছে ওর প্রিয় গানঃ “ম্যায়নে তুঝকো দিল সে দিলহি দিয়া তুমহি শোচো তুম নে মুঝসে ক্যা কিয়া... ইয়ে তুম নে ক্যা কিয়া......।” বিছানা বালিস যেন ঢেকে আছে তার বকুলের আঘ্রাণে। সকলে একথা জানে ভালোবাসলেই শয্যা হয় তিক্ত মাটি, ভালোবাসা-বাসি ,ঝরে যায় প্রেমের ফুল, শরীরের সুখের সংজ্ঞাটি বদলাতে থাকে যেন একাদশী চাঁদ মুহূর্ত আগে, জ্যোৎস্নায় ভাসাভাসি-গা ঢলাঢলি, আবার মুহূর্তে অবসাদ......

শুনেছিলাম তার অবসাদ গুলো বাঁধানো ফটোর ফ্রেমে, আর শরীর পুড়েছে তার শুধুই আগুন প্রেমে এবং...

এখনও ভদ্র সমাজের ধনী পরিবার নিপীড়ণ করে চলেছে মেয়েদের আড়ালে আবডালে? আবার এরাই বাইরে 'নারী দিবস' পালন করছে ধুমধাম করে, বাড়ির বৌ্দের নিপীড়ন করে? এরা কবে বদলাবে?

যদিও জানি নিরবেই ঘটে সব কিছু, এতো মৌন, চুপচাপ, যেন সূর্য এসে পড়ার আগেই লাজুক রাত্রি লুকিয়ে নেয় নিজেকে আকাশের ওপাশে... ঠিক যেন প্রিয়াংকার মতন।

প্লেনে আসতে আসতে এই প্রিয়াংকার অসমাপ্ত গল্প-এর শেষ কি হবে ভাবতে ভাবতে নিজের সংসারের দেশ ডালাস পৌঁছে গেলাম।

অভিবাসী মনের ঘরে ফেরার টানে বার বার গেছি কলকাতায় কিন্তু আর দেখা হয় নি প্রিয়াংকার সাথে। বেলুড় মঠ, সারদা মঠেও খুঁজে বেড়িয়েছি তাকে, পাই নি তার দেখা।

কোথায় হারিয়ে গেল স্বপ্ন দেখা আরেক নারী। তিল তিল করে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় যে মন্দির সে মনের মধ্যে গড়ে তুলেছিল, সেখানে সে তার প্রিয় ও অপ্রিয় মানুষজনদের নিজের মনের মাধুরী মিশিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু কোথায় গেল তার সাজানো মন্দির?

হয়ত ঠিকই দেখা পাব গোলাকার পৃ্থিবীর কোন এক কোণে। আমি আশার হাত ধরে হেঁটে যাই সময়বেলায়! পাশাপাশি! অথচ নিজের দেশ আমায় ভীষণ টানে! গঙ্গা নদীর পারে মেঘেদের সাথে ভীড় করে মন উড়ে যায়, কলকাতা এলেই! পাশে তাকাই, দেখি সমস্ত চরাচর জুড়ে সে একা...ভীষণ একা! হায়! একাকিনীর যে কোন বান্ধব থাকতে নেই, তাই তো এত সাধের নাম!

কিন্তু কী আশ্চর্য, কেউ বলতে পারে না, কোনদিক থেকে আসে নৈ্তিকতার সুর, হারিয়ে যাওয়া মানুষ, সেই সুর খুঁজতে খুঁজতেই তো ক্ষয়ে-বয়ে যায় আমাদের এক একটা জীবন। এক একটা স্মৃ্তি।



2 comments:

  1. এক অসাধারণ উপস্থাপনা এবং এমন সাবলীল অথচ চিরপ্রাসঙ্গিক সত্য কথন এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে॥ এক কথায় , দুরন্ত ।

    Typed with Panini Keypad

    উত্তরমুছুন
  2. আমরা যারা লেখকের লেখা পড়তে অভ্যস্ত, জানি লেখা কী রকম সরল অকপট। এটাও ব্যতিক্রম নয়।

    উত্তরমুছুন