সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

রবীন্দ্রশ্রদ্ধার্ঘ - শিবাশিস রায়

রবীন্দ্রশ্রদ্ধার্ঘ
শিবাশিস রায়


আমার বেঁচে থাকার শীর্ণতায় যদি সে সত্যি থেকে থাকে তবে আমি বুঝবো আমার জীবন স্বার্থক!! অনেকে অনেক কিছু ভাবে, ভাবায় !! লেখে কালবৈশাখীর নামে প্রেমের দস্তাবেজ, শুধু দলিলটা তখনো বন্দক থেকে যায় যার নামে, যার কাছে, তাকে ভাঙ্গাতেই তো আধুনিকতার চায়ে চুমুক মারা! তাই না...

একবিংশ শতাব্দীর রোদ্দুর ক্রমশ ঢলে পরছে, তোমাকে যে সবাই মহর্ষি বলছে হে কবি!!! তুমি ও কি তবে আমার থেকে ক্রমশ দুরে সরে গেলে, তুমিও কি তবে তোমার আঙুল ছারিয়ে আমাকে ঠেলে দিলে নিঠুর বাস্তবে অজানা কিছু সাব্যস্ত করার আশায়...

কিন্তু, কিন্তু আমি তো তোমাকে ছারিনি সখা,আমার আনন্দ থেকে দুঃখ, প্রেম থেকে বিরহে! আমি তোমাকে পাশ ছাড়া করিনি একটি বারও আমার আজন্মকৈশোর যৌবনে ...তবু কেন এই বিচ্ছেদ দিলে নীরব বিবর্ণতায়!!

তুমি তো সব ই জানো, যখন বন্ধুরা ডাক্তার হতে চেয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছে, হতে চেয়েছে কারুর স্বামী, প্রেমিক, পিতা...আমি তখন রবিন্দ্রনাথ হতে চেয়েছি তোমার ছায়ায়, তোমাকে দেখে! লোকে আমায় পাগল বলেছে,উন্মাদ বলেছে,হেঁসেছে আমাকে দেখে আর চোখে চেয়ে, আর আমি নির্বাক নিরুত্তর থেকে চোখ বন্ধ করে শুধু তোমার মুখখানা মনে করেছি যে ভাবে তুমি ধরা দিতে ঘুমের নৈমিষারণ্যে!! কানে কানে তুমি ই তো আমায় ওদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে শিখিয়েছিলে- হ্যাঁ হ্যাঁ আমি উন্মাদ, আমি পাগল আমি উন্মাদ, কারন আমার জীবন থিতিয়ে যায়নি ধুসর বাঁচার পসরা সাজাতে সাজাতে!! আমি স্বীকার করি আমি উন্মাদ কারন এখনো আমার মধ্যে বাঁচার উন্মাদনা আছে!!! তবে কেন আজ ভানু দাদা এই ভাবে মুখ ফেরালে আমার মননে!! তবে কেন আজ আমায় আর আগের মত ভালোবাসো না, কেন আমার কলমের কালিকে শাসন করতে আজ তোমার আজ উদাসিনতা...

এক এক করে আমায় ছেরেছে আমার প্রিয় শৈশব,আমার স্মৃতিভেজা কৈশোর, যৌবনের রং বেরংএর উচ্ছ্বাস!!কিন্তু তুমি পাশে থেকেছো অনুক্ষন!!! প্রিয় বন্ধু দের মুখ বদলেছে সময়ের দাবী মেনে, কিন্তু তুমি সাড়া দিয়েছো "চির সখা" সম্বোধনে!! প্রিয়তম প্রেমিকা যখন অহ রহ বিরহ মালা জপতে আমায় ফেলে রেখে গেছে একা,আমার সেই রাত জাগার প্রহরে এই শহরে আমি তোমাকেই পেয়েছি পাশে, আমার বেড়ে ওঠার অবকাশে। দিনযাপনের পর্বের প্রশ্বাসে তখন শুধুই সুনীল,শক্তি, সুবোধ, আর জয়... আর কত কবি এগিয়ে এসেছিলো আমার জোলো অনুভুতিতে, তবু আমি একটি বারও ছারিনি তোমার তর্জনি!! তবে কেন নাথ, আজ তোমার এই অভিমান আমার প্রতি?? আমার এই জীবনতো তোমারই উপজাত, আমার ভাষা, অনুভুতি, প্রেম সবই তো তোমার মেঘের ই ধারাপাত...

মনে পরে, যখন বিধাতা পুরুষ আমায় ভাষা নির্বাচনের স্বাধীনতা দিয়েছিল, তখন তো আমি তোমাকেই ভালোবেসে বাংলাকে ছুঁয়েছিলুম চোখ বন্ধ করে!! চোখ বন্ধ করে তোমার হাত ধরেছিলুম চিরমুক্তির জীবন সেবনে এক দুর্গম পথে পা বাড়িয়ে! ফুরিয়ে যাওয়া অন্তরে যে ঢেলে ছিল মৃত সঞ্জিবনি সুধা, সে তো শুধু তুমি...

আমি আজো ঠিক তেমন ভাবেই দাঁড়িয়ে সবার পিছনে ,যেভাবে দাঁড়িয়ে শুনতাম বিদ্বদজনেদের মুখে তোমার স্তুতি, ভজনা, সমালোচনা আর ............!! কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেছি তোমার অবাধ্য হয়ে, কারন থাকতে পারিনি!!আবার নিজেকে বুঝিয়েছি তোমার আয়নায়!! কিন্তু তুমিই বল মিনি কি সইতে পারে কাবুলিওালার অপমান, কিম্বা ফটিক কি বাঁচতে পেরেছিল তার ওই দমবন্ধ করা শহুরে জীবনে...
বিশ্বাস কর, আজ আমারও এক বাঁও মেলে না...দুই বাঁও মেলে না...
তোমাকে ছাড়া আমার এই জীবন এক মাত্রা হীন, অর্থ হীন শব্দের মত...
আমি শব্দ জব্দ যেমন মুহূর্তে মেলাই, আমাকে অভাবনীয় ভাবে তুমি জব্দ করলে যে শব্দের বন্ধনে,সেই বাঁধনের সাধনে শুধু সেইটুকু শব্দ কেই মন্ত্র করে তোমার পায়ে দিয়ে গেলুম আমার ভালোবাসার বিহ্বলতা ...অনুরোধ শুধু-
চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না ।
সংসারগহনে নির্ভয়নির্ভর, নির্জনসজনে সঙ্গে রহো ।।
অধনের হও ধন, অনাথের নাথ হও হে, অবলের বল ।
জরাভারাতুরে নবীন করো ওহে সুধাসাগর ।।
ভালো থেকো... শেষের বেলায় জানায় পাগল শুভ জন্ম দিন!!!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন