সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৩

গুচ্ছ কবিতা - অনুপ কুমার দত্ত

গুচ্ছ কবিতা
অনুপ কুমার দত্ত




তোর ওড়না ভেজা বৃষ্টি বুকের ত্রাসে

এমন যে তোর সুন্দরতার ভান
মায়ের চোখে সবাই একই তান ৷
বিষাদ মুখে বিষন্নতার ঢেউ
আমার চোখে ভীষন আপন কেউ ৷৷

ভয় পাস নে নেবে না কেউ কেড়ে
বাড়া ভাত দেবে না নোতুন করে বেড়ে ৷
তু হি মেরী, …ও তু হি মেরী জান
থাক না ঠোঁটে মেরিজুয়ানার ঘ্রান ৷৷

ঠোঁট ছোঁয়ালে আকাশ ভাঙ্গে আমার
প্রথম চুমু’র আনন্দ তাই অপার ৷
তারপরে কত রাতজাগা চোখ ভাবে
একটু হাসি তোর বসন্ত ফুল পাবে ৷৷

গোলাপ নিয়ে আদিখ্যেতা ভীষণ
সে রকম’ই তোর মনটা ভাবে যখন ৷
বুকের উপরে শক্ত দু হাত ঠুকে
কল করেছি তোর বন্ধ ফোন বুকে ৷৷

দেখিস আবার অন্য কিছু না ভাবিস
সোনা বুকুল সঙ্গে আমার থাকিস ৷
পদ্যে গদ্যে মিলে ছন্দ যেমন হয়
এস এম এস’এ মন নিরূদ্দেশ ভয় ৷৷

বুক ব্লাউজে ব্লুটুথ লাগিয়ে রাখিস
ঘরে যদি হৃদয় উদাস থাকিস ৷
মেঘলাকাশে যদি সিগন্যল না থাকে
শব্দ ভাইব চলবে এঁকে বেঁকে ৷৷

বার বার তোকে বলেছি ঘনিষ্ঠ বেশে
সব রাস্তাই শেষ তোর বাড়ি এসে ৷
রবিঠাকুর থাকুন দু লাইন ভালবেসে
তোর ওড়না ভেজা বৃষ্টি বুকের ত্রাসে ৷৷



বুকের জমানো লতা


তোমার বুকের জমানো লতারা কি বলে ? সামন্য শান্তির জন্যে যদি চুরি হয়ে যাই লতারা কি বেঁধে ফেলবে আমায় ।
কেন ? হিংসুটেপনা । হিংসের নামে বড়াই ।
আমার তুমি’কে দজ্জাল আয়ত্ত করেছি কেমন …
পরবাসী চোর ভো কাট্টা হয়ে যায় ..লাটাই গুটিয়ে লাঙল-হাটায়
রেল লাইনের দুপাশে নারীর দুকুল তুলে দিয়ে অনায়াসে ফিরে আসে বুকের জমানো লতায়

নতুন পাখীরা কি বলে ?
পাখীরা তো নির্বিশেষ আলাপ ভালবাসে ।নতুন পাখীর সঙ্গ হলে বয়েস উচ্ছিসিত কমে আসে
আজলা ভরা জল যেন ঊপচে পড়ে সমুদ্র সৈকতে …সমুদ্র লজ্জা পায় ।
মনের চার কোনের বন্ধ দরজা খুলে নারী পাখী বসে তাতে
যৌবন আজলা ক’রে টিন এজেড নারী পাখী
পায়ে আঁটো সাটো জিনস ..
বুকে don’t dare to touch me টপ
চুল মুঠো করে বাঁধা পেছনের দিকে …যেন ঘোড়া ছূটে চলেছে সারাক্ষণ
চোখে রঙ্গিন সুরমা…না না ভুল হলো বুঝি
অনুপ দত্ত …বুড়ো হয়ে গেছ..correct করো….ওটা eye liner….

আবার হিংসুটে বুকের লতারা ফিরে জড়ো হয় । একটা বেশ গোল টেবিল হয়
বর্ষিয়ান শক্ত বট লতা বলে…
-লতা সঞ্জিবিনী…তোমার ফুটফুটে পাখী যে ডালে বসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাপের মতন
রং চঙ্গা জিনস প্রেরনায়
বুড়ো বট তাই হেলেছে কোল জাগায়… চুলবুলে পাখীটাকে বাঁধো এবার খাঁচায়
বয়েসের কি দোষ ….বয়েস বাড়ে যে নিতান্ত সবুজ তাড়নায় ।



বেলা পড়ে যায়

তুমি যদি আমায় না রাখো কাছে ৷ না রেখো!
দেখি মনে প্রানে তোমার ছায়া রেখে ঘরে
একা বেঁচে থাকতে পারি কিনা?

একা জীবনের দাম তো বেশী বই তো নয়
তুমি সাথে থাকলে দোগর হতাম…
ভিন্ন কথা বলা বুলবুল, ল্যাকি জোড়া শালিকের মতো ৷
ছায়া তো নিলাম হয় না…..আর
ছায়ার যে কি দাম তাও জানি না৷

একুশ বছর কুয়াশা বিবাহ বাসরের… কিছু নেই
কিছুই তো নেই!
অন্ধকার সমাস হয়ে জড়িয়েছে বেদনা৷
বেদনাবিভাসশোকপাপীতাপী চেঁচিয়ে বলেছে –
ও পৃথিবী তুমি কি একাই ধর্ষন দায়িত্ব নিয়েছো ?
কুয়াশা বিবাহ যে একবার রোজ ক্ষয়ে যাওয়া ধর্ষন
সে তুমি জানো!
না হলে একুশ বসন্ত কূয়াশা আবেগে নিঃশব্দ সহবাসে
সবেগ মিলনের একপেশী আকাঙ্খা কি পরিমিত ধর্ষন নয় ?

কিছু নেই … কিছুই তো নেই !
মন পড়ে আছে…মন সেখানে নেই
উলঙ্গতা যেখানে সেজেছে…মনের ভেতর
কাপড় প্রাচুর্য্য শরীর জড়িয়ে ফুলটুসি সাজে ৷

দ্যাখো এতো কথা বলা
সে তো তোমার’ই জন্য…জেনে যাও…জেনে যাও
একান্ত ভাবে জেনে যাও
তোমার ছায়া করে, ঘরে রেখে খিল দিলে
সংসার উন্মুক্ত খোলা বেদ হয়ে যায় ৷

কিছু নেই …কিছুই তো নেই !
কিছু থাকে না কোথাও…
একুশ কুয়াশা বসন্ত পেরিয়ে..বেলা পড়ে যায় ৷



সুনীল শুন্য পারাবার

নবমী গুঞ্জন ছেড়ে...তিনি চলে গেলেন ইহলোকধামে ।
যাঁর কবিতা পড়ে আবার জন্ম নিয়ে
পা জমিয়েছিলাম কবিতার আসরে ।

হে অনন্ত বাহূ আকাশ
হে দূরন্ত সবুজ পৃথিবী
পথিকৃত চিত্রকরের আনন্দ সুবাসে শান্তি দিও তাঁকে ।

হে ঈশ্বর তুমি তো অন্তরযামী

তুমি দেখো......
তাঁর যাবার পথে বৈতরনী পুন্যজলে স্নাত হোক
যে ভাবে মাঙ্গলিক শ্লোক ভেসে আসে পবিত্র গঙ্গাজলে
সেই ভাবে তাঁর মঙ্গল শব ব্যথাকাঠে মহাশয়ান
যেন প্রভু যিশুকে বইতে দেয়া ব্যথামহান ।

তুমি দেখো.....
গঙ্গা থেকে যমুনা..গোদাবরী সিন্ধু হয়ে স্বরস্বতী থেকে পদ্মা জলে
তাঁর ক্লান্ত মুখ যেন ধুয়ে দেয়া হয়
তাঁর কমল নরম শরীরে যেন বর্ষন করো নির্ঝরের সুখে অমৃত বারি ।
হে মহা নিম কৃঞ্চচূড়া শাল সেগুনে বন মহাক্রম

তুমি আদেশ দাও......
তাঁর যাত্রা পথে সমস্ত গাছেরা যেন তাঁকে দেয়
শান্ত গন্ধবিতান মহানির্ঝর ছায়াঘুম ।
মহানিম শান্ত বটের পাতার মৃদুল হাওয়ায়
সে শান্ত ঘুমায়....সে শান্ত ঘুমায়
তাঁর শেষ যাত্রা পথ মহীহান হোক আবর্ও সুখের সুখমহানে ।

তুমি দেখো.....
তাঁর যেন কোনো আঘাত না লাগে ।
সে পুরূষ বিশাল এক দেশ পরিবার নিয়ে হেঁটেছেন
পৃথিবীর পথে আটাওর কাল
শত কবিতা পথিকবরকে পথিকৃত করেছেন
কবিতার অঙ্গনে ভালবাসা শব্দ চয়নে
আজ শবানুগামীর পিছে তারা একাকী দু:খে দাঁড়িয়ে ।

আজ পঁচিশে অক্টোবর কাল দুহাজার বারো
জানুক.......

তাঁর মুখে গহীন সমুদ্র আলো
তাঁর শরীর নীলাদ্রী মৃত্যুহীন ।




দেশাদেশ সেই বাঙ্গলাদেশ

প্রতিটি গ্রাম প্রত্যেক অপরুপা মায়ের মমতা উপমা
মায়ের লম্বা আঁচল ফেলা আচুম্বি মমতা ভিতে
মা আসে পাশে বাপ মা মরা ছেলেকে করুনা আঁচল দিতে
প্রতিটি গ্রাম শান্তি প্রতীক—যেন দিগন্ত বড় উৎসব নমুনা ।

সেই একবার সব কিছূ ফেলে রেখে আসা রেশ
বারবার অপরুপ সেই দেশাদেশ বাঙ্গলাদেশ ।

ফেলে আসা দেশ.. ফেলে আসা স্মৃতি বেড়ে ওঠা গল্প
প্রতিবেশী শৈশব পরিজন..কিশোর পরিযায়ী হরমোন
কিশোর বেহিসেবী পাখী আত্রেয়ী শঙ্খ উলঙ্গতা জলে
ভালোবাসা বেশ, আধুরী স্মৃতি উন্মেষ
সব কিছু ফেলে রেখে আসা দেশাদেশ ... সেই বাঙ্গলাদেশ ।

কিশোরীর হাঁটু মোড়া বসা লক্ষে অলক্ষে
ফ্রকের সীমানা ঘেরাটোপ ছোট হয়ে এলে
সযত্ন শাড়ীর শরীরে গাছ কোমড় বাঁধা
উন্নত বুক উন্নিত আঁচলে ঢেকে রাখা অহঙ্কার সুখ-মুখ
চোখে এক অজানা ভাষা যেন ..এক এক শব্দকোষ
কত কথা ..না বলে যাওয়া ..না বলা কথা
কিছু অস্ফুট অটুক্তির মেলমশা হর্ষ স্বর
হ্রেষার মতো সারা রাত জাগায় সকালের প্রতীক্ষায়
সব কিছু ফেলে রেখে আসা দেশাদেশ সেই বাঙ্গলাদেশ ।

সেই সব অবহিত ..অকথিত..অবনমন ক্ষন
বট গাছের ঝুড়ি আত্রেয়ী নদী জল ছুঁয়ে ফেলে
ছাঁচা বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে চোখের আধারে
ঢুকে পড়ে দুপুর নব বরবধুর মধুর আপন
রাত ফুরালে আবার ভাল লাগা ফরসা ভোর
উঠোনে শালিক চড়ুই ডাক ..চিক চিক
দেশভাগা দেশ ..স্মৃতি কান্না স্তব্ধতা
সব কিছু ফেলে আসা দেশাদেশ সেই বাঙ্গলাদেশ ।




0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন