সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

শাহবাগ প্রত্যয় ও ভবিষ্যৎ! - শ্রীশুভ্র

শাহবাগ প্রত্যয় ও ভবিষ্যৎ!
শ্রীশুভ্র



বাংলাদেশ জ্বলছে! মানুষ মরছে! সাধারণ নিরীহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত! সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর জামাত ও জামাত পন্থীদের আক্রমণ অব্যহত! রাষ্টীয় প্রশাসনিক দূর্বলতাগুলি ক্রমেই প্রকট হচ্ছে! ইসলামের নামে হুঙ্কার তুলে জামাত ও শিবির ঝাঁপিয়ে পড়েছে সহিংস্র আন্দোলনে! লক্ষ্য তাদের প্রগতিশীল গণজাগরণ মঞ্চ! লক্ষ্য তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনকে প্রতিরোধ করা! লক্ষ্য তাদের রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করে সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত রাষ্ট্রদ্রোহী জামাতি নেতাদের মুক্ত করে আনা! লক্ষ্য তাদের শাহবাগ প্রজন্ম! শাহবাগ প্রজন্ম জাতির কণ্ঠে যে সাহস যুগিয়েছে, তাকে অঙ্কুরেই খতম করা!

শাহবাগে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে গণঅবস্থান সারা বাংলাদেশে অভুতপূর্ব সাড়া ফেলে দিয়েছে! ৪২ বছর ধরে জাতির অন্তরে দেশদ্রোহী পাকপন্থী এই নৃশংস রাজাকারদের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, এই প্রজন্মের এই আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তির একটা প্রশস্ত রাজপথ খুঁজে পেয়েছে! প্রধানত প্রথাগত রাজনীতির বাইরে সাধারণ নাগরিক মঞ্চের এই আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে মানুষকে রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে একত্র করতে সফল হয়! অধিকাংশ মানুষই মনে করেছিলেন এই আন্দোলন তাঁরও আন্দোলন! ধৃত রাজাকারদের ফাঁসিই, ৪২ বছর আগে ঘটে যাওয়া নরমেধ যজ্ঞের সঠিক বিচার! সারা দেশের জনমানুষের অধিকাংশই এই বোধ থেকেই এই আন্দোলনের সাথে পা মেলাতে পথে নামেন!

শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতে মূল সংগঠক এক্টিভিস্ট ব্লগারদের বেশিরভাগই বাম রাজনীতির সমর্থক হওয়ায় তাঁদের এই আন্দোলনের একটা অভিমুখ ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জামাতের মধ্যে গোপন রাজনৈতিক সমঝতার সম্ভাবনার বিরুদ্ধে! কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের রায়ে জামাত-ই ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়াটাকে এই ব্লগার এক্টিভিস্টরা ঐ দুইদলের বোঝাপরার ফল বলেই সন্দেহ করেন! কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড থেকে এই রেহাই দেওয়াটা আওয়ামী লীগের নিরপেক্ষতার প্রতি তাঁদের যথেষ্ট সন্দিহান করে তোলে! এবং সাম্ভব্য এই বোঝাপরার বিরুদ্ধেই জনমত গঠনে তাঁরা কাদেরের ফাঁসির দাবীতে সোচ্চার হন শাহবাগে!

এদিকে আগামী নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্রশাসনিক অদক্ষতা, দূর্বলতা; স্বজন পোষণ; সরকারের সর্বস্তরে অবাধ দূর্নীতি এবং আওয়ামী লীগ ও বিশেষ করে তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের লাগামছাড়া দৌরাত্ম্য প্রভৃতি কারণে জনমানসে আওয়ামী লীগ বেশ কোণটাসা হয়ে পড়েছিল! বিরোধীরা সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে তাদের পালে জনসমর্থনের হাওয়া টানতে বেশ অনেকটাই ফাঁকা ময়দান পেয়ে যাচ্ছিল! শাহবাগের এই আন্দোলন লীগের সামনে এনে দিল সুবর্ণ সুযোগ! লীগ নেতৃত্ব অত্যন্ত সুকৌশলে ছাত্রলীগকে এই আন্দোলনে সামিল করতে সফল হলেন! তাঁদের কাজটা সহজ হয়ে যায় আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ব্লগারদের একটা অংশের সাথে ছাত্রলীগের কিছু নেতার সৌহার্দ্য থাকায়!

এই সময়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মের এই আন্দোলনের প্রতি তাঁর আবেগ ও সহানুভুতি প্রকাশ করায় আওয়ামী লীগের পক্ষে শাহবাগের নতুন প্রজন্মের এই আন্দোলনকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের অনুকূলে টেনে নেওয়া আরও সহজ হয় খুব দ্রুততার সাথে! ফলে বামপন্থী মনোভাব সম্পন্ন আন্দোলনকারীরা কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যেতে বাধ্য হয়! আন্দোলনের পুরোধায় চলে আসে সরকারপন্থী জনসমর্থন! আর তখনই কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবির সাথে যুক্ত হয়ে যায় সব রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের দাবি! শুরু হয় জামাত নিষিদ্ধকরণের স্লোগান! রাজনীতি থেকে ধর্মীয় দলগুলির অপসারণ সহ সংবিধানে "রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম" বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে প্রজন্ম চত্বর!

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটা মূল লক্ষ্যই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের! কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে সাথেই সেই লক্ষ্যকে কবরে পাঠিয়ে দেন জিয়া! পরে এরশাদ এসে সংবিধানে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেন! বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এই লক্ষ্যের হত্যার সাথে দেখেছেন কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকপন্থী মৌলবাদীরা রাতারাতি সরকারি বদান্যতায় ফুলে ফেঁপে উঠে এক একটা কেষ্টবিষ্টু হয়ে বসেছেন সমাজের মাথায়! তাঁদের এই অবদমিত ক্ষোভই যেন মুক্তি পেয়েছে শাহবাগে নতুন প্রজন্মের এই আন্দোলনের ভাষায়! এটাই আজকের গণজাগরণের ভিত্তি!

বাংলাদেশে বিগত ৪২ বছরে মানুষ স্বৈরাচারী সামরিক শাসন আর রাজনৈতিক দলগুলির দূর্নীতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ করে ভিতরে ভিতরে ক্ষোভের বারুদ জমিয়ে তুলেছে! তারা অসহায় ভাবে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে দেশটাকে পাকপন্থী রাজাকাররা মৌলবাদী মোল্লাতন্ত্রের শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলেছে! কিভাবে জামাত সমাজের সকল স্তরে মৌলবাদের জ্বাল বিছিয়েছে! তারা ইসলামিক ব্যাঙ্ক গঠন করা থেকে শিল্পবাণিজ্যে প্রবেশ করেছে!

জামাতের লোকেরা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নিয়েছে! ফলে একদিকে দূর্নীতি আর একদিকে জামাতের বারবড়ন্ত সাধারণ জনগনের একটা বড় অংশকেই ক্ষুব্ধ করে তুলেছে সেখানে!

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে দুটি ঘটনা সমান্তরাল ঘটেছে! একদিকে শিক্ষাদীক্ষার সুযোগ প্রাপ্ত এক শ্রেণীর জনগণের মধ্যে ধর্মীয় সংস্কারের আবদ্ধতা থেকে মুক্তি এবং বাঙালি জাতীয়তার উন্মেষের প্রকাশ ঘটেছে ব্যাপক হারে! অন্যদিকে আর এক শ্রেণীর মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনায় বাঙালি জাতীয়তার বিপক্ষে ইসলামিক জাতীয়তাবোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দ্রুত! স্বভাবতই জামাত ও বিভিন্ন ইসলামিক দলগুলি বাংলাদেশের এই বিরাট অংশের ইসলামীকরণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে! এর ফলে আজকের বাংলাদেশে একটি সুস্পষ্ট বিভাজনের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে! বাঙালি জাতীয়তার প্রবক্তারা সবকিছু ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে! আর গোঁড়া ইসলামীরা এদের ইসলামের শত্রু বলে মনে করে!

শাহবাগে অবস্থানরত গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে এভাবেই বাংলাদেশ আজ পরস্পর বিরোধী দুই শিবিরে বিভক্ত! একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ নবজাগ্রত বাংলা- নতুন প্রজন্মের হাত ধরে উন্নত ভবিষ্যতমুখী আশায় স্বপ্ন বুনছে নতুনদিনের, স্লোগানে গানে কবিতায় মানববন্ধনে!

অন্যদিকে গোঁড়া মৌলবাদী ইসলামিক চেতনায় বিশ্বাসী যারা, তারা বাংলাদেশকে ধর্মীয় অনুশাসনে পরিচালনা করার মধ্যে দিয়েই ইসলামের আদর্শ সুরক্ষিত করতে উৎসাহী! ফলত প্রধান দুই রাজনৈতিক দল এখন এই দুই শিবিরের মধ্যেই তাদের ভোট ব্যাঙ্ক গুছিয়ে নিতে ব্যাস্ত! এরই প্রেক্ষিতে শাহবাগের আন্দোলনের অভিমুখ নির্ধারিত হতে বাধ্য! ফলে এই অরাজনৈতিক আন্দোলন আজ আর অরাজনৈতিক নেই!

সাধারণ মানুষ যদিও সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে দেশকে রাজাকার মুক্ত করা ও রাজনীতি থেকে ধর্মীয় দলগুলিকে দূর করতে এই আন্দোলনে শামিল হন! কিন্তু একদিকে যেমন আওয়ামী লীগ সুকৌশলে এই আন্দোলনকে দলীয়স্বার্থের সাথে যুক্ত করে ফেলে অন্যদিকে প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি জামাতের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়! ফলে রাজনীতি নিরপেক্ষ মানুষরা আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্নতা বোধ করতে থাকেন! ফলত বর্তমানে আওয়ামী সমর্থকরা শাহবাগ আন্দোলনের সাথে যেমন সম্পৃক্ত তেমনি আওয়ামী বিরোধীরা আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুক্তি শানাতে উদ্যত! মাঝখান থেকে আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে জামাতের পক্ষে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিভাজন!

ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতেই শাহবাগের গণ আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে জামাত ও জামাত পন্থী অন্যান্য ইসলামিক দলগুলি বিশেষ করে ইসলামিক ছাত্রশিবির সহ শাহবাগ বিরোধী গোষ্ঠী সব রকম বিধ্বংসী কার্যকলাপ শুরু করেছে সারা দেশ জুড়ে! শাহবাগ আন্দোলনের প্রায় শুরুতেই আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা ব্লগার রাজীব হায়দারকে এই বিরোধী গোষ্ঠীরই অজ্ঞাত পরিচয় দূর্বৃত্তদের হাতে খুন হতে হয় নৃশংস ভাবে! এই খুনের জের ধরে আমার দেশ পত্রিকায় রাজীবের নামে ইসলাম বিরোধী কুৎসা ছড়ানোর অভিযোগ প্রচার করা হয় সফল ভাবে! এর ফল হয় মারাত্মক! জামাত পন্থীরা দেশের বৃহত্তর মুসলিম সমাজে প্রচার করতে থাকে, শাহবাগের আন্দোলন ইসলাম বিরোধী নাস্তিকদের এক চক্রান্ত!

ফলে ধর্মপ্রাণ ধর্মভীরু মুসলিমদেরকে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিয়ে আসার জন্যেই শাহবাগ আন্দোলন ইসলাম বিরোধী নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র বলে আমার দেশ সহ জামাত পন্থী কাগজগুলি প্রচার করতে থাকে! এদের প্রচারের মুখ্য অভিমুখ হল রাজাকারদের ফাঁসির দাবি করছে যারা তারা নাস্তিক এবং ইসলাম বিরোধী! ভারতের র-ই নাকি এই আন্দোলনের পিছনে কলকাঠি নাড়ছে! এই প্রচারের দুইটি সুবিধে - এক, আন্দোলনের পক্ষ থাকা অনেকের ইসলামিক আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে তাদের সন্দিহান করে তোলা! এবং দুই, মৌলবাদী জঙ্গী মনোভাবাপন্ন যুবশক্তিকে ক্ষিপ্ত করে তোলা! শাহবাগ আন্দোলনকে এভাবেই দূর্বল করে দিতে অগ্রসর হয় জামাতের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম!

এই আন্দোলনের সাথে আঃলীগের সংযুক্তিকে অনেকেই ভালো ভাবে মেনে নিতে পারেননি! বিশেষত বিএনপির সমর্থকরা! কিন্তু প্রাথমিক ভাবে শাহবাগের পাশে এরা অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নৈতিক সমর্থন নিয়ে! এদিকে বিরোধী জোট অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের ইসলামিক তাস খেলে শাহবাগ আন্দোলনকে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ বনাম ইসলামের সংঘর্ষের রূপ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে! ইতিমধ্যেই এর সুফল ফলতে শুরু করেছে! একদল যেখানে রাজাকার মুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী আধুনিক বাংলাদেশের জন্য শাহবাগকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গণজাগরণের ঢেউ তুলেছে! অন্যপক্ষ তখন এইটিকে ভারতের গোপন ষড়যন্ত্রের ফলে ইসলাম বিপন্ন প্রচার করে দেশের জনগণকে মৌলবাদী শক্তির পক্ষে ধরে রাখতে চায়!

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া, স্বাধীনতা ও ইসলামকে পরস্পর বিরোধী ভূমিকায়- মুখোমুখি এনে দাঁড় করানোর জন্য আঃলী ও শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করেছেন! জামাত শিবির প্রচার করছে আঃলী রাজনৈতিক বিদ্বেষ বশত রাজাকারদের বিচারের নামে তাদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে! এর মধ্যে দেশবাসীকে নাস্তিক ও আস্তিকের বিভাজনে বিভক্ত করতে আমারদেশের মতো কাগজগুলি যথেষ্ঠই সফল! ফলে শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ আন্দোলন বিপুল প্রতিকুলতা ও প্রতিরোধের সম্মুখীন! আশ্চর্যের বিষয় এর মধ্যেও এই আন্দোলনকারীরা তাদের প্রত্যয়ে অটল থেকে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারা দেশে!

২৮শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সাম্প্রতিকতম রায়ে কুখ্যাত রাজাকার হোসেইন দেলোয়ার সাঈদীর ফাঁসির ঘোষণায় জামাত শিবির ও অন্যান্য মৌলবাদী জঙ্গি শক্তিগুলি সারা দেশে যে সহিংস্র ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে তাতে এযাবৎ শতাধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন! সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর শুরু হয়েছে অত্যাচার! উদ্দেশ্য পরিষ্কার! সারাদেশে একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দিতে পারলে শাহবাগ আন্দোলনের মুখ ঘুরে যেতে বাধ্য! তাদের অন্যতম লক্ষ্য আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক থেকে নেতাদের প্রাণনাশ! এই সুযোগে জামাত শিবির সারা দেশের জনজীবন স্তব্ধ করে সন্ত্রস্ত করে তুলেছে সাধারণ মানুষকে! এভাবেই তারা শাহবাগকে ব্যর্থ করতে বদ্ধ পরিকর!

দেশের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে জামাত শিবিরের সহিংস তাণ্ডবলীলার মধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির জামাতের পক্ষ নেওয়ায় দেশ আজ স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভাজিত! একপক্ষ বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তার পক্ষে আর অন্যপক্ষ ইসলামিক জাতীয়তার পত্তনে বদ্ধপরিকর! এখন এই দুই পক্ষের গোলমালে রাজাকারমুক্ত দেশ গঠনের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ খুবই জটিল হয়ে পড়ছে! এখানেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির শর্তাবলী বিশেষভাবে নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে! দেশের অভ্যন্তরে জামাত নিষিদ্ধকরণের যে দাবি উঠেছে বৃটেন ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করতে বলেছে তারা নিষিদ্ধ করা সমর্থন করে না! মনে রাখতে হবে এই বৃটিশ মার্কিণ জোটই সারাবিশ্বে মৌলবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ করে বেড়ায়!

মৌলবাদী সংগঠন জামাতের বাড়বাড়ন্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী দেশবাসী বিক্ষুব্ধ সন্ত্রস্ত! তারা অনেকেই মনে করছেন জামাতকে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশে একে অতীত করে দেওয়ার এই এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে! তাই তারা শাহবাগের গণজাগরণকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলছেন! মুক্তি পাকপন্থী রাজাকার ও তাদের উত্তরসুরিদের থেকে! মুক্তি মৌলবাদী অপশক্তির সন্ত্রাস থেকে! মুক্তি ধর্মীয় গোঁড়ামীর মধ্য যুগীয় মানসিকতা থেকে! গত দুই মাসের জামাতী নাশকতা তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণার পক্ষে যথেষ্ঠ বলেই মনে করছেন দেশবাসীর এই অংশ! উল্টদিকে জামাতের শিকড় সমাজদেহের অনেক গভীরেই প্রবেশ করেছে! ফলে নিষিদ্ধ ঘোষণাই সমাধান আনবে না বলে মনে করেন অনেকেই!

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গত নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থনে জয়ী হয় প্রধানত দুই কারণে! এক বিএনপির বিদায়ী সরকারের ব্যাপক দূর্নীতি আর যুদ্ধপরাধীদের বিচার করার শপথ দেওয়া! ফলে প্রতিশ্রুতিমত বিচার সংঘটিত না করে কোনো উপায়ও ছিল না, বিশেষ করে তাদের এই সরকারেরও ব্যাপক দূর্নীতি চাপা দিতে! তবুও বর্তমান সরকার জামাত নিষিদ্ধ করতে এখনো অপারগ কারণ বৃটেন ও মার্কিণ প্রশাসন থেকে কোনো সবুজ সংকেত আসেনি! বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর বাংলাদেশ পুরোপুরি মার্কিণ পকেটে চলে যায়! ফলে বাংলাদেশের মতো দূর্বল দেশগুলিতে মার্কিণস্বার্থ যেভাবে মৌলবাদের পোষকতা দিয়ে চলে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যাতিক্রম হয়নি এযাবৎ! তাই সরকারেরও হাতপা বাঁধা!

গত চার দশক ধরে বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তিগুলি পুষ্ট হয়েছে মার্কিণ বরাভয়ে আর পেট্রোডলারের সৌজন্যে! দীর্ঘ সামরিক শাসনকালে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিগুলো সংহত হয়ছে জিয়া ও এরশাদের ছত্রছায়ায়! আর সেই কারণেই বিএনপির শাসনকালে জামাতের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে দ্রুত! ফলে আজকে জামাত বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নির্নায়ক শক্তি! যার ওপর মার্কিণ আশীর্বাদ থাকায় এই বীভৎস তাণ্ডব লীলা চালাতে পারছে নিশ্চিন্তে! আর ঠিক এইখানেই হাসিনা সরকারও জামাতের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে অপারোগ! তাঁর দলেও যে জামাতপন্থী নেই তা নয়! ফলে জামাতের এই সহিংসতা আর বিএনপির সক্রিয় বিরোধিতার মধ্যে শাহবাগের গণজাগরণ কতটা সফল হবে বলা শক্ত!

শাহবাগের গণজাগরণের এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে নতুন প্রজন্ম জয়ী হবে কিনা ভবিষ্যতই বলবে! কিন্তু তারা জানে ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকার সক্রিয় বিরোধিতা সত্ত্বেও স্বাধীন হয়েছিল বাংলাদেশ! যদিও তখন বিশ্বশক্তির ভারসাম্যে ভারতের পক্ষে সম্ভব হয়ে ছিল মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করা! আজকের পরিবর্তীত বিশ্ববন্দোবস্তে তা আর কখনোই সম্ভব নয়! তাই নতুন প্রজন্মের পক্ষে কাজটা বড়োই কঠিন! তাদের এই গণজাগরণকে তাই সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে! দেশের সর্বত্র মৌলবাদী শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে জনগণ থেকে! একমাত্র তবেই হয়তো সম্ভব লক্ষ্য পৌঁছানো! নতুন প্রজন্ম আপোষহীন প্রত্যয়ে সেই লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারলে মুক্ত হবে দেশ মৌলবাদ থেকে!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন