সৌকর্য গ্রুপের একমাত্র ওয়েবজিন।

About the Template

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

মুক্তগদ্য - শিবাশীষ রায়

হরষ গীত উচ্ছসিত হে, আনন্দ বসন্ত সমাগমে...
শিবাশীষ রায়


আমার কবিতায় আমি ছিলুম সর্বাধিনায়ক,আর আমার একাধিপত্যে যে নাক গলাতো তার নাকটি কেটে হাতে ধরিয়ে দেওয়া যে শুধু সময়ের অপেক্ষা তা ছিল সর্বজন বিদিত!তাই একটা উন্নাসিক তকমা দামী কাশ্মীরি শালের মত আমার গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সময় থেকে যখন কৈশোরের দোসর ছিল সাদামাটা রোদ্দুর,আর তল্পীবাহকের কুলপি আর রঙিন বরফগোলা খাওয়া চেয়ে দেখার নীরব মুহূর্তে, আমি শুধু খেতুম ফলের রস, অনীহা আর স্পৃহাহীনতায়!তবু আমি ছিলুম উন্নাসিক,ক্লাসিক সৌজন্যের ধ্বজা ধরে...

লেখাটি লিখতে বসে ফেসবুকিয় লেখক হিসেবে আমায় মাথায় রাখতে হচ্ছে ভাষা যেন সহজ সরল হয়! গরল গিলতে আপত্তি নেই,কিন্তু বাংলা ভাষা সোজা করে না লিখলে আজকাল দক্ষ লেখকের নরম রুচিশীল গরম বক্ষ প্রাপ্তির আশা ক্ষীণ, তাছাড়া শক্ত বাংলা পড়া আর নিজের পিঠ নিজে চুলকানো এখন কয়েনের এই পিঠ আর ঐ পিঠ...

তা যাইহোক,আমি লিখি আমার মননশীলতায়, আগে একে ওকে ট্যাগ করতুম, এখন ট্যাগ করাটা ত্যাগ করেছি কারন "লিটল ম্যাগ" নামক ম্যাগ-ই- বাজীতে জড়িয়ে এটা বুঝেছি সবই ঘর সাজানোর জিনিস,কেউ পড়েনি...কেউ পড়েনা, চৌত্রিশ বছর কেটে গেছে কেউ কথা রাখেনি, শুধু বুকের মধ্যে বন্দী "বর্তমান" রেখে বরুণা বলেছিল ভগবান ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না... পিছিয়ে পড়ার ভয়েই কেবল তখন পড়তে হয়েছিল প্রেমে, "প্রতিদিন" দিয়ে শুরু করে যখন এসে থামলুম একটু এগিয়ে সেই প্রফুল্ল সরকার ষ্ট্রীটে... তখন আমার জীবনে শীতের সকাল আর উনিশ কুড়ির দেশ!আজ যখন নিজেকে দেখি আয়নায় তখন হিসেবি ক্লিন সেভিং করা মুখে দাড়িওয়ালা সেই স্বপ্নের মানুষ টাকে সত্যি খুঁজে পাই না... ! এক এক সময় বড় কান্না পায় যখন দে'জ পাবলিশার্স এর দাড়িওয়ালা মামা ( দিবাকর ব্যানার্জি) কফি হাউসের সামনে থেকে আমার গাড়িতে উঠে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করে -"কিরে লেখালিখি একদম ছেড়ে দিলি নাকি...?? মাল কামালে কি আর কাব্য আসে চাঁদু... অ্যারোর শার্ট পড়ে আর যাইহোক সংস্কৃত কলেজের সিঁড়িতে বসে শক্তি সুনীল আওরানো যায় না...তার জন্যে সেই খাদির পাঞ্জাবী টা দরকার... ও তুই তো আজকাল ফ্যাব ইন্ডিয়া পরিস!!!" আমি শুধু হাঁসি আর মনে মনে বলি আজ আমার কপি রাইট নেই ঠিক কথা কিন্তু "দেশ" থেকে সোজা ফেসবুক,থুরি মহাদেশ সেকি কম কথা!!!!

এখন নিজেই লিখি নিজেই পড়ি... যারা আমায় ভালবাসেন তারা আমার দেওয়ালে আসেন,টিপে ভালবাসা ভালোলাগা জানিয়ে যান,আমি ও প্রতিভালবাসা জানাই... এখন একলা একলাই মাল খাই, যারা আমার মেজাজ ভালবাসেন তারা আসেন আমি আর ট্যাগ করে লোকের দেওয়ালে গিয়ে নিজেকে মাতাল, লেখক প্রতিপন্ন করা বন্ধ করে দিয়েছি,কারন আমি বুঝেছি মাথা চুলকানো মানুষদের বেশি না চুলকানোই ভালো, কারণ কখন যে এদের চুলকানি সুরসুরি তে রূপান্তরিত হয় আর আমি উন্নাসিক থেকে হয়ে উঠি নন্দ ঘোষ তা বোঝার আগেই এক ঝাঁক ভুঁইফোর সাহিত্য দালালরা গেয়ে ওঠে- "ওকে ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না ছিঃ... ও যে চণ্ডালিকার ঝি!!!"

তাই খোলা মনে ফেসবুকে এলেও এখন কথা বলতে দ্বিধা হয়,দুবিধা হয় এই মর্মে যে আমি তো প্রেম চোপড়া, ছোপরা ঘসি গায়ে, প্রাণে আমার রবীন্দ্রনাথ কাদা লাগে পায়ে।

তবু ভালোলাগার কোঁচানো ধুতি আর মন্দলাগার গিলে করা পাঞ্জাবী পড়ি রোজ, কখনো সোনায় সোহাগা হলে এই হতভাগার পাঞ্জাবীতে বন্ধুত্বের আতর লাগে, আসর জমে,ক্রমে রাত বাড়ে... ! আড়ে যারা তাকায় পর্দার ওপাশ থেকে তাদের জন্যেও রাখা থাকে গোলাপ জলে চোবানো কিমাম জর্দা পান, কিন্তু ফুলের সাথে পান শুকোয় ঝাড় বাতির আলো ম্লান হয়ে আসে... পূর্বে হাল্কা আলোর আভা দেখা যায়...এক এক করে তাকিয়ায় এলিয়ে দিয়ে শরীর নিভে আসে চ্যাট বক্সের সবুজ আলো...

আমি তখনো জেগে থাকি,একলা একা ভোরের হাওয়া গায়ে মাখতে আমার ভীষণ ভাললাগে... ! সব ক্লান্তি,সব ব্যাথা,সব অক্ষমতা, অপবাদ যেন ধুয়ে যায়... কানে কানে কে যেন বলে যায়-" হরষ গীত উচ্ছসিত হে, আনন্দ বসন্ত সমাগমে!!!"





0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন